30.5.11


আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ধর্মীয় নেতাদের অবদান
শাহ আলম বাদশা
 
মাওলানা মোসলেম উদ্দিন কুড়িগ্রাম জেলাধীন পাতিলাপুর মধ্যপাড়া জামে মসজিদের একজন ইমাম। তিনি পাঁচওয়াক্ত নামাজে ইমামতির পাশাপাশি ১৯৮৭-৮৮ সালে রাজশাহী ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমী থেকে দেড়মাসব্যাপী মূল প্রশিক্ষণগ্রহণের পর ‘মানবসম্পদ উন্নয়নে ধর্মীয় নেতাদের সম্পৃক্তকরণ’ প্রকল্পের অধীনেও প্রশিক্ষণগ্রহণ করেন। তিনি আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, দারিদ্র্যবিমোচনের লক্ষ্যে কৃষি, হাঁস-মুরগির খামার, বৃক্ষরোপন, স্যানিটেশন, নিরক্ষরতাদূরীকরণ, পুষ্টিসচেতনতা, উন্নত পরিবেশসংরক্ষণ ইত্যাদি বিষয়ে ব্যাপক গণসচেতনতাসৃষ্টির পাশাপাশি এসবে নিজেকেও নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত করেছেন। এভাবে কুড়িগ্রামজেলা ও রাজশাহী বিভাগের মানবসম্পদ উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখায় তাকে ২০০৫ সালে জেলা ও বিভাগীয়পর্যায়ে শ্রেষ্ঠইমাম হিসেবে পুরস্কৃত করা হয়। ‘মানবসম্পদ উন্নয়নে ধর্মীয় নেতাদের সম্পৃক্তকরণ’ প্রকল্পের অধীনে প্রশিক্ষণগ্রহণের পর তিনি এলাকার জনসাধারণের মাঝে প্রজননস্বাস্থ্যসেবা, বাল্যবিবাহ ও যৌতুক প্রতিরোধ, আদর্শ পরিবারগঠন, সন্ত্রাস ও মাদকাসক্তিরোধ, নিরাপদ মাতৃত্ব, নারীশিক্ষার গুরুত্ব এবং অধিকারপ্রতিষ্ঠা, নারী ও শিশুপাচাররোধ, এইচআইভি/এইড্স থেকে মুক্তি, গণশিক্ষা এবং আর্থ-সামাজিক বিভিন্ন উন্নয়নমূলক বিষয়ে বক্তব্য দিয়ে থাকেন। প্রশিক্ষণের আলোকে তিনি মৎস্যখামার প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্নমুখী কার্যকলাপে জড়িত আছেন। এজন্যই মানবসম্পদ উন্নয়নে ব্যাপক অবদানের জন্য সরকার তাকে ২০০৫ সালের জাতীয়পর্যায়ের শ্রেষ্ঠইমাম হিসেবেও পুরস্কৃত করেন।

শ্রেষ্ঠইমাম হিসেবে পুরস্কৃত আরো কতিপয় ইমামের অবদান এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে। কুষ্টিয়া ঈদগাহপাড়া জামে মসজিদের খতিব ও পেশইমাম আফম নাজমুস সালেহীন খুলনাবিভাগের শ্রেষ্ঠইমাম ছাড়াও ২০০৩ সালে জাতীয়পর্যায়ে শ্রেষ্ঠইমাম নির্বাচিত হন। প্রশিক্ষণের আলোকে মৎস্যখামার প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সেবামূলক কাজে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য তাকে পুরস্কৃত করা হয়। সিলেট উপজেলাপরিষদ জামে মসজিদের পেশইমাম হাফিজ ইদ্রিস আহমদ নিরাপদমাতৃত্ব, বাল্যবিবাহ নিরুৎসাহিতকরণ, মা ও শিশুঅধিকারসহ বিভিন্নপ্রকার উন্নয়ন ও সেবামূলক কাজের স্বীকৃতস্বরূপ ২০০৩ সালে সিলেট বিভাগীয়পর্যায়ের শ্রেষ্ঠইমাম নির্বাচিত হন। বৃক্ষরোপন, স্যানিটেশন, এইড্সপ্রতিরোধসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য সিলেটের শাহ ফরিদ মসজিদের ইমাম মাওলানা আবুল কালাম আজাদকে ২০০৩ সালের ঢাকা বিভাগীয়পর্যায়ের শ্রেষ্ঠইমাম নির্বাচিত করা হয়। একজন সফল ইমাম হিসেবে বরিশালের সড়কভবন মসনজিদের পেশইমাম মাওলানা আব্দুস সালাম ২০০৩ সালের বরিশাল বিভাগীয়পর্যায়ে শ্রেষ্ঠইমাম নির্বাচিত হন। বৃক্ষরোপন, স্যানিটেশন, মসজিদপাঠাগার প্রতিষ্ঠা, এইড্স ও মাদকাসক্তিরোধ, পরিবেশরক্ষার বিষয়ে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য রাজশাহীর বামনদিঘী মধ্যপাড়া জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা কাজী সাদিকুল ইসলামকে ২০০৩ সালের রাজশাহী বিভাগীয়পর্যায়ের শ্রেষ্ঠইমাম নির্বাচিত করা হয়। স্যানিটেশন, এইড্স, বাল্যবিবাহ, যৌতুক ও সন্ত্রাসরোধ, শিশু ও নারীর অধিকার বিষয়ে অবদানের জন্য চট্টগ্রামের সাতবাড়ীয়া জামে মসজিদের পেশইমাম মাওলানা মাহবুবুল হাসান ২০০৩ সালে চট্টগাম বিভাগীয়পর্যায়ের শ্রেষ্ঠইমাম নির্বাচিত হন। অনুরূপভাবে রাজবাড়ীর সেনগ্রাম মাদ্রাসা মসজিদের ইমাম আওয়াবুল্লাহ ইব্রাহীম ও ময়মনসিংহের দাউদপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম মাও. আব্দুর রহমানকে যৌথভাবে ঢাকা বিভাগীয়পর্যায়ে ২০০৫ সালের শ্রেষ্ঠইমাম, চাঁদপুর পুরাতন ফেরিঘাট জামে মসজিদের ইমাম মাও. আহসানুল করীম আল্ আযহারী ও চট্টগ্রামের নুরে মোহাম্মদী জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মাও. মহিউল হককে যৌথভাবে ২০০৫ সালে চট্টগ্রামবিভাগের শ্রেষ্ঠইমাম, ঝিনাইদহের আদর্শ আন্দুলিয়া  জামে মসজিদের ইমাম মাও. মঈন উদ্দিন ও কুষ্টিয়ার মহদীপুর জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মাও. আব্দুল হান্নানকে যৌথভাবে খুলনাবিভাগের শ্রেষ্ঠইমাম, পাবনার  বনওয়ারী নগর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম মাও. জহুরুল হক সাবেরীকে রাজশাহীবিভাগের শ্রেষ্ঠইমাম, ঝালকাঠির জুরকাঠি বামনকাঠি মফিজিয়া  জামে মসজিদের ইমাম মাও. এইচ এম মশিউর রহমানকে বরিশালবিভাগের শ্রেষ্ঠইমাম এবং সুনামগঞ্জের চিক্কা জামে মসজিদের ইমাম মাও. আবদুর রহমানকে সিলেটবিভাগের  শ্রেষ্ঠইমাম নির্বাচিত করা হয়।  গাজীপুরের মাও. মমতাজ উদ্দিন ২০০৬ সালের জাতীয়পর্যায়ের শ্রেষ্ঠইমাম, ঢাকার মাও. মুফতী আব্দুস সাত্তার ঢাকাবিভাগের ২০০৬ সালের শ্রেষ্ঠইমাম, চট্টগ্রামের মাও. আবুল কালাম আজাদ ও খাগড়াছড়ির কে এম আবদুস সুবহান যৌথভাবে ২০০৬ সালের চট্টগ্রামের শ্রেষ্ঠইমাম, সুনামগঞ্জের মাও. মুজিবর রহমান ও সিলেটের মাও. আলাউদ্দিন বিশ্বাস ২০০৬ সালের সিলেটবিভাগের  যুগ্ম শ্রেষ্ঠইমাম, বাগেরহাটের মাও. আবু তালিব খান খুলনাবিভাগের শ্রেষ্ঠইমাম এবং বগুড়ার মাও. বেলাল হোসেন রাজশাহীবিভাগের শ্রেষ্ঠইমাম নির্বাচিত হয়েছেন। 
      
উল্লেখ্য, ১৯৯৪ সালে কায়রোয় অনুষ্ঠিত ‘জনসংখ্যা ও উন্নয়ন’ সম্মেলন’ এবং ১৯৯৫ সালে বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত ‘ওয়ার্ল্ড উইমেন‘স প্লাটফরম অব অ্যাকশন’ এর পরিপ্রেক্ষিতে ‘‘প্রজননস্বাস্থ্য ও জেন্ডার ইস্যু’’ বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে স্থানলাভ করে। জনসংখ্যা ও উন্নয়ন বিষয়ক সম্মেলনে আগামী ২০১৫ সালের মধ্যে যেসব লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে (১) সবার জন্য উচ্চতর গুণগত মানসম্পন্ন প্রজননস্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করার মাধ্যমে পরিকল্পিত পরিবারগঠন ও জনসংখ্যার স্থিতি আনয়ন করা (২) সমাজের সর্বস্তরের মহিলাদের অধিকারসংরক্ষণ ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা (৩) মাতৃ ও শিশুমৃত্যুর হার কমিয়ে আনা ইত্যাদি। এধরণের জনগুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচিসমুহের সফল বাস্তবায়নের জন্য সমাজের অত্যন্ত প্রভাবশালী ধর্মীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সমর্থনলাভ এবং তাদের সক্রিয় সম্পৃক্ততা যে অত্যন্ত জরুরি, তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। কেননা এদেশে মূল্যবোধের প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে সাধারন জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে এবং তাদের ধারণা ও আচরণগত দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আনয়নের ক্ষেত্রে ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের সম্পৃক্ত হবার যেমন রয়েছে অপূর্ব সুযোগ, তেমনি তাদের যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারলে সবচে ভালো ফলাফল পাওয়াও স্বাভাবিক। কারণ সামাজিক মূল্যবোধসৃষ্টি ও সংরক্ষণের ক্ষেত্রে ধর্মীয় নেতা বিশেষত; ইমামগণের রয়েছে যাদুকরী ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। অতীতে পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা হিসেবে ইসলামধর্ম সম্পর্কে সমাজে যে সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় পাওয়া যেতো, আজকাল ইসলামের সঠিক ব্যাখ্যা ও উদার দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপক প্রসারের কারণে সে ধারণা আর বিদ্যমান নেই। ফলে বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ কার্যক্রমে সক্রিয় সহযোগী হিসেবে ধর্মীয় নেতৃবৃন্দকে পাওয়া মোটেই অসম্ভব নয়। সুতরাং স্থানীয় জনগণের প্রজননস্বাস্থ্য ও অধিকার (Reproductive health and rights), নিরাপদ মাতৃত্ব, পরিকল্পিত পরিবার, এইচআইভি/এইড্স এবং নর-নারীর সামাজিক বৈষম্যদূরীরণের মাধ্যমে সমতা আনয়নের জন্য এসময় ইমামগণের নিবিড় সম্পৃক্ততা ও অংশগ্রহণবৃদ্ধির পদক্ষেপগ্রহণ অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত ও যুগোপযোগী বটে। তাই দু‘লক্ষ সত্তর হাজার মসজিদের পাঁচলক্ষাধিক ইমাম ও বাংলাদেশের মুয়াজ্জিন ১৪কোটি মানুষকে মূল্যবান সম্পদ হিসেবে গড়ে তুলে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখতে পারেন অনায়াসেই। তারা দৈনিক  পাঁচওয়াক্ত নামাজে ইমামতির সাথেসাথে নিজেদের মেধা ও শ্রম এবং মসজিদের বিদ্যমান অবকাঠামোগত সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে সহজেই জাতীয় উন্নয়নে এগিয়ে আসতে পারেন।

উপরোক্ত উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই ধর্মীয় নেতাদের জনসংখ্যা কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে এবং ‘প্রজননস্বাস্থ্য ও জেন্ডার ইস্যু’ এর গুরুত্ব অনুধাবন করে জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (UNFPA) এর অর্থায়নে ধর্মমন্ত্রণালয় ‘‘মানবসম্পদ উন্নয়নে ধর্মীয় নেতাদের সম্পৃক্তকরণ’’ শীর্ষক প্রকল্পটি হাতে নেয়। ২কোটি ৫২লক্ষ  টাকা ব্যয়সম্বলিত প্রকল্পটির প্রথমপর্যায়ের মেয়াদ ছিল ১৯৯৯-২০০২ সাল এবং এসময় প্রায় সাড়ে ১৫হাজার ইমামকে প্রশিক্ষণদান করা হয়েছে ও ১২৮জন ইমামকে প্রশিক্ষক হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। এছাড়া ৬৪টি জেলায় বিভিন্ন পেশাজীবী ব্যক্তির সমন্বয়ে ৩২০টি পরামশর্কসভাও অনুষ্ঠিত হয়। প্রথমপর্যায়ের সফল বাস্তবায়নের কারণে UNFPA (ইউএনএফপিএ) কর্তৃৃক প্রকল্পটিকে ‘সফল প্রকল্প’ হিসেবে স্বীকৃতিদান করা হয়েছে। দ্বিতীয়পর্যায়ে ৪কোটি সাড়ে ৩৩লাখ টাকা ব্যয়ে ২০০৩ থেকে ২০০৫ সাল মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়। এ মেয়াদে প্রায় সাড়ে ১৬হাজার ইমামকে প্রশিক্ষণদান এবং ২০৩জনকে প্রশিক্ষক হিসেবে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। তাছাড়া জেলা-উপজেলাপর্যায়ে ৩৮৪টি পরামশর্কসভা করা হয়। এ পর্যায়ে ইমামগণের পাশাপাশি হিন্দু ও বৌদ্ধধর্মীয় নেতাদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করা হয় এবং ধর্মভীরু মুসলিম নারীদের প্রশিক্ষণদানের কার্যক্রমও অন্তর্ভূক্ত করা হয়। ফলে ২য়পর্যায়ে ৩,০৪০জন হিন্দুধর্মীয় নেতা, ৩৯০জন বৌদ্ধধর্মীয় নেতা ও ৪৮০জন মুসলিম মহিলাকে প্রশিক্ষণদান করা সম্ভব হয়। প্রকল্পটির সফলতা বিবেচনা করে ৮কোটি ৪৪লক্ষ টাকার (বৈদেশিক সহায়তা ৮৩৪.০০ লাখ) তৃতীয়পর্যায়ের কার্যক্রম শুরু করা হয় ২০০৬ সালের জানুয়ারিমাসে। এর মেয়াদকাল ২০১০সাল পর্যন্ত এবং এর কার্যক্রম বর্তমানে ৬৪টি জেলাতেই বিস্তৃত। প্রকল্পটির বাস্তবায়নকৌশল হিসেবে  ধর্মমন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ৭টি ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমি ও জেলাপর্যায়ের কার্যালয়সমূহের অধীন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ইমামদ্বারা সাপ্তাহিক জুম্মার নামাজের খুৎবাহ, মিলাদমাহফিল, বিবাহ অনুষ্ঠান ও অন্যান্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সমাজের সর্বস্তরের জনগণকে কর্মসূচিতে পরামর্শদাতা হিসেবে সম্পৃক্তকরণছাড়াও হিন্দুধর্মীয় কল্যাণট্রাস্ট ও বৌদ্ধধর্মীয় কল্যাণট্রাস্টের মাধ্যমে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ধর্মীয় নেতাদের দ্বারাও গণসচেতনতাসৃষ্টি এবং বৃদ্ধির কাজ চলছে।
  এ প্রকল্পের মূলউদ্দেশ্য হচ্ছে- একটি আদর্শ পরিবারগঠনের লক্ষ্যে জনসাধারণকে প্রজননস্বাস্থ্য, জেন্ডার ইস্যু, এইচআইভি/এইড্স সম্পর্কে জ্ঞানদান এবং পরিবারকল্যানের মাধ্যমে জনসংখ্যার স্থিতি আনায়নে সহায়তা করা; প্রজননস্বাস্থ্য, জেন্ডার ইস্যু ও পরিবারকল্যানের অনুকূল পরিবেশতৈরির ক্ষেত্রে জনসাধারণের আচরণগত পরিবর্তনের জন্য সক্রিয়তাবৃদ্ধিতে পরামর্শদাতা হিসেবে ধর্মীয় নেতাদের সম্পৃক্ত করা; প্রকল্পমেয়াদে ১৮হাজার ধর্মীয় নেতাকে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে প্রজননস্বাস্থ্য, জেন্ডার ইস্যু, এইচআইভি/এইড্স, পরিবারকল্যাণ, নিরাপদ মাতৃত্ব, মাদকাশক্তি ও পরিবেশসংরক্ষণ ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষণদানসহ উপজেলাপর্যায়ে ৬৪০টি পরামর্শকসভার আয়োজন এবং এসময়ে ২,৮৫০জন মুসলিম নারী ও ৪০০জন কাজিকে একই বিষয়ে প্রশিক্ষণদান করা। এছাড়া প্রকল্পের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে- (ক) দেশের ৬৪টি জেলার ২৬০জন ধর্মীয় নেতা ও জেলাকর্মকর্তাকে প্রজননস্বাস্থ্য, জেন্ডার ইস্যু, এইচআইভি/এইড্স, নিরাপদ মাতৃত্ব ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষনদানের মাধ্যমে প্রশিক্ষক হিসেবে গড়ে তোলা; (খ) ১৫হাজার ইমামকে প্রজননস্বাস্থ্য, নিরাপদ মাতৃত্ব ও শিশুস্বাস্থ্য পরিচর্যা, পরিবারকল্যাণ, নারীর অধিকারসংরক্ষণ, এইচআইভি/এইড্স ও মানবস্পদ উন্নয়নের ওপর প্রশিক্ষণপ্রদান করে জনসংখ্যা কার্যক্রমে ইমামগণকে সম্পৃক্ত করা; (গ) ২৪০০জন হিন্দুধর্মীয় নেতা, ৬০০জন বৌদ্ধধর্মীয় নেতা,  ২,৮৫০জন ধর্মভীরু মুসলিম নারী ও ৪০০জন কাজিকে উক্ত বিষয়ের ওপর প্রশিক্ষণদান করা; (ঘ) প্রজননস্বাস্থ্য ও অধিকার এবং জেন্ডার ইস্যু বিষয়ে দেশের প্রতিটি জেলার উপজেলাপর্যায়ে ১০টি করে মোট ৬৪০টি পরার্শকসভার আয়োজন করা; (ঙ) প্রশিক্ষণোত্তর ইমামদের ফলোআপ কার্যক্রমকে জোরদার করার লক্ষ্যে বিভাগপর্যায়ে ১৪টি, জাতীয়পর্যায়ে ৩টি সম্মেলন ও জেলাপর্যায়ে ৩২০টি কোর-লিডার প্রশিক্ষণকোর্সের আয়োজন করা; (চ) প্রশিক্ষণ কারিকুলাম উন্নয়নে মাঠপর্যায়ের বাস্তবায়ন কার্যক্রমকে কার্যকর করার জন্য প্রশিক্ষকদের নিয়ে ৫টি বার্ষিকসভার ব্যবস্থা করা এবং (ছ) প্রজননস্বাস্থ্য, পরিকল্পিত পরিবার, এইচআইভি/এইড্স ও নারীর অধিকার বিষয়ে বাস্তব জ্ঞানলাভের জন্য শিক্ষাসফরের আয়োজন করা।

উল্লেখ্য যে, তৃতীয়পর্যায়ে জানুয়ারি’০৬ থেকে ডিসেম্বর’০৬ পর্যন্ত ছয়মাসে ৬৪টি জেলার প্রায় ১৮০০জন ইমাম, হিন্দুধর্মীয় কল্যাণট্রাস্টের মাধ্যমে প্রায় ৩০০জন হিন্দুধর্মীয় নেতা এবং বৌদ্ধধর্মীয় কল্যাণট্রাস্টের আওতায় প্রায় ৪০০জন বৌদ্ধধর্মীয় নেতাকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এছাড়া এপর্যন্ত ৬০০জন মুসলিম মহিলাকেও প্রশিক্ষণদান করা হয়েছে। সুতরাং ’’মানবসম্পদ উন্নয়নে ধর্মীয় নেতাদের সম্পৃক্তকরণ‘‘ প্রকল্পটি ২০১০ সালে সফলভাবে সুসম্পন্ন হলেই দেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে পাঁচলক্ষাধিক ইমাম-মুয়াজ্জিনছাড়াও অন্যান্য ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের ব্যাপক অবদান সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হবে বলে আশা করা যায়। প্রসঙ্গক্রমে সাম্প্রতিককালে ইমামদের সবচে বড় অবদানের কথাটি এখানে না বললেই নয়। আর তা হচ্ছে, সন্ত্রাসী শায়খ আবদুর রহমান ও বাংলা ভাইর নেতৃত্বে সারাদেশে হত্যা এবং সিরিজ বোমাহামলার বিরুদ্ধে মসজিদের ইমামগণ শেষমূহুর্তে যদি একযোগে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ ও সামাজিক আন্দোলন গড়ে না তুলতেন, তবে ইসলামের নাম ব্যবহারকারী এসব ভন্ডদের এত সহজেই পাকড়াও করা সম্ভব ছিলনা। যখুনি জাতীয় মসজিদের খতিব ফতোয়ার মাধ্যমে এদের প্রতিরোধের ডাক দিলেন, অমনি দেশের আনাচে-কানাচে গড়ে উঠলো ইমাম-জনতার নিচ্ছিদ্র প্রতিরোধব্যুহ। ফলে আত্মগোপনকারী জঙ্গীরা আর পালাবার পথ খুঁজে পেলোনা, দ্রুত ধরা পড়ে গেলো এবং ফাঁসি কার্যকরের মাধ্যমেই ঘটলো এদের নবসন্ত্রাসের যবনিকাপাত!