23.5.11


নারীনির্যাতনে নবমাত্রা
 ইভটিজিং, প্রেম ও কিশোরীর আত্মহত্যা
শাহ আলম বাদশা

ইস্কুল-কলেজগামী ছাত্রী ও কিশোরীদের ওপর পাশবিক ও অমানবিক নির্যাতনের মাত্রাবৃদ্ধি ইদানিং সর্বকালের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। পথে-ঘাটে, কর্মস্থলে সর্বত্রই তাদের প্রতি অকথ্য-অশস্নীল ভাষাপ্রয়োগ, ইভটিজিং , জোরপূর্বক প্রেমনিবেদন, গায়ে হাতদেয়া, ওড়না-জামা ধরে টানা, অসম বিয়ের জন্য অন্যায় চাপ, জোরপূর্বক ও একতরফা বিয়ের প্রসত্মাব, অপহরণ ও জোরপূর্বক বিবাহকরণসহ নানাভাবে উত্যক্তকণের প্রবণতাবৃদ্ধি পাওয়ায় অভিভাবকমহল এবং সর্বসত্মরের জনগণ রীতিমত হতবাক ও আতঙ্কিত।

সরকারও তাই মেয়েদের ইস্কহলের সামনে সাদাপোশাকধারী পুলিশনিয়োগসহ নানারকম নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থাগ্রহণ করলেও দমানো যাচ্ছেনা সংশিস্নষ্ট বখাটেদের। বখাটেদের তালিকায় রাজনৈতিক ছাত্র ক্যাডারদের নামও উঠে আসছে পত্রিকার পাতায়, যাকে একবিংশ শতাব্দির সপ্তাশ্চর্যের অন্যতম একটি বলে বিশ্বাস না করে উপায় নেই আমাদের। কয়েকমাস যাবৎ পত্রিকার পাতায় বারবার শিরোনাম হচ্ছে---’কেরোসিন দিয়ে পুড়িয়ে মারা হলো পিংকিকে, বখাটেদের অত্যাচারে ইলোরার আত্মহত্যা, চারম্নকলার ছাত্রী সিমির আত্মহনন, আত্মসম্মান বাঁচাতে তৃষাও ঝরে গেলো অকালে, ঈশ্বরদীতে একই দিনে বৃষ্টি ও ফাহিমা নামক দুই ইস্কুলছাত্রীর আত্মহত্যা, ঘরে ঢুকে বড়বোনকে আটকে রেখে ছোটবোনকে গণধর্ষণ,ঢাকা পলিটেকনিকে দলীয়ক্যাডার কর্তৃক দিনেদুপুরে ক্লাশরম্নমে ছাত্রীধর্ষণ, প্রেম ও বিয়ের প্রসত্মাব প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় মেয়ের মা-বাবা খুন, মেয়ের বেইজ্জতি সইতে না পেরে বাপের আত্মহত্যা  ইত্যাদি খবর।  

আইয়ামে জাহিলিয়াতের যুগে নারী ও শিশুনির্যাতনরোধ এবং তাদের যৌননিরাপত্তায় ব্যর্থতার দরম্নণ অভিভাবকরা কন্যাশিশু ও নারীদের জ্যামত্ম কবর দিতো, যাকে আমরা মধ্যযুগীয় বর্বরতা বলে নিন্দা করে থাকি। কিন্তু আমাদের সমাজের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়েও ছাত্র-শিক্ষকনামধারী এবং দলীয় ক্যাডারদের হাতে নারীশিক্ষকসহ ছাত্রীধর্ষণ-নারীনির্যাতন এমনকি ছাত্রীধর্ষণের সেঞ্চুরী পালনের ঘটনাকেই বা কী বলে অভিহিত করবেন! আমরা কি মধ্যযুগকে আদৌ অতিক্রম করতে পেরেছি, তা আবার নতন করে ভাবতে হবে আমাদের।  

একারণে দিনের পর দিন একের পর এক বেড়েই চলেছে আত্মহত্যাসহ নবতর সব নারীনির্যাতনের ঘটনা ; পাশাপাশি যোগ হয়েছে প্রেম বা বিয়ের প্রসত্মাব প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় মেয়ের অভিভাবককে হত্যার মত ঘটনাও, যার কিছু সংবাদ হয়তো আমরা পত্রিকামত্মরে জানতে পাচ্ছি। কিন্তু পত্রিকায় না আসা এ রকম হাজারো নারী ও শিশুনির্যাতনসহ তাদের পরিবারের দুর্দশার খবর কি আমরা জানতে পারছি?

মেয়েদের উত্যক্তকরণের বিরুদ্ধে সরাসরি কোন আইন না থাকলেও নারী ও শিশুনির্যাতন দমন (সংশোধন) আইন-২০০৩ এর আওতায় এসব অপকর্মের বিরম্নদ্ধে আইনের আশ্রয় নেয়া যায়। নারী ও শিশুনির্যাতন দমন আইন-২০০৩ অনুসারে কোন নারী সম্ভ্রমহানীর কারণে আত্নহত্যা করলে, আত্নহত্যার প্ররোচনার দায়ে অপরাধীকে শাসিত্ম দেওয়ার বিধান রয়েছে। সরকারও এসব অপকর্মের জন্য আরও কঠোর কার্যকর আইনপ্রণয়নের চেষ্টা করছে।

তবে অপরাধ প্রমাণের ঝামেলা, বিচারপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রিতা, আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণের ফলে আরো বেশি নিরাপত্তাহীনতা বা হয়রানির আশংকা, সামাজিক লজ্জা ইত্যাদির দরম্নণ অধিকাংশক্ষেত্রেই অভিভাবকগণ আইনের আশ্রয় নিতে আগ্রহী হননা। ফলে বখাটেরা দ্বিগুণ উৎসাহে এ সকল কাজ করতে থাকে। কিন্তু অভিভাবকগণ ন্যায়বিচার প্রাপ্তিসহ দ্রতবিচারসম্পন্নের আশ্বাস এবং নিশ্চয়তা পেলে হয়তো আইনগত প্রতিরোধ ও প্রতিকারে এগিয়ে আসতে আগ্রহী হবেন।

বাংলাদেশের দন্ডবিধি অনুযায়ীও এ ধরণের অপকর্মের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব। দন্ডবিধির ২৯৪ নং ধারানুযায়ী, যদি কোন ব্যক্তি অন্যকে বিরক্ত করার উদ্দেশ্যে প্রকাশ্যস্থানে অশস্নীল কার্যকলাপ বা অশস্ন­ীল গান, আবৃত্তি বা উচ্চারণ করে, তবে সে ব্যক্তি যেকোন বর্ণনায় কারাদন্ড যার মেয়াদ ৩ মাস পর্যমত্ম হতে পারে বা জরিমানা বা উভয়দন্ডে দন্ডিত হবে। দন্ডবিধির ৫০৯ নং ধারামতে, যদি কোন ব্যক্তি কোন নারীর শালীনতার অমর্যাদা করার উদ্দেশ্যে কোন মমত্মব্য করে বা কোন শব্দ বা অঙ্গভঙ্গি করে বা কোন বস্ত্ত প্রদর্শন করে, তবে সে ব্যক্তি বিনাশ্রম কারাদন্ড যার মেয়াদ ১ বছর হতে পারে বা জরিমানা বা উভয়বিধ দন্ডে দন্ডিত হবে। নারীদের উত্ত্যক্ত করার ক্ষেত্রে বিধান আছে তিনমাস বা ১ বছরের কারাদন্ড কিংবা দু’হাজার টাকা জরিমানা।