11.8.11


ঈদুল ফিতর
মানবতাবোধের এক মহান শিক্ষা
শাহ আলম বাদশা

ছেলেটি পথের ধারে অঝোরে কাঁদছে। পাশ কেটে সবাই চলে যাচ্ছে যে যার কাজে অথবা নতুন জামা-কাপড় কিনে ফিরছে্বাড়িতে। কিন্তু তার দিকে কারও নজর নেই। হঠাৎ নজর আটকে গেল একজনের। তিনি থমকে দাঁড়ালেন। জিজ্ঞেস করলেনঃ কাঁদছো কেন, বাবা?
-আমার মা-বাবা নেই। ঈদের দিনে আমাকে নতুন কাপড় কে দেবে? তাই কাঁদছি।
-এসো আমার সঙ্গে, তোমারও নতুন পোশাক হবে-বলে তিনি তার জন্য নতুন পোশাক কিনে তবে বাড়ি ফিরলেন।
এতিমশিশুকে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ডাকলেন সহধর্মিনী আয়েশা (রাঃ)কে, দেখো-কাকে নিয়ে এসেছি, সে-ও আমার মত এতিম। একে গোসল দিয়ে নতুন জামা কাপড় পরিয়ে দাও। মহানবীর (সাঃ) স্ত্রী সঙ্গে সঙ্গে তাকে ঈদের সাজে সাজিয়ে দিলেন। ছেলেটি তখন মৃত মা-বাবার শোক ভুলে আনন্দে একেবারে আত্নহারা।

ইসলামের দুটি ঈদই আসলে ত্যাগের আনন্দে অদ্বিতীয়। যদিও ঈদ শব্দের অর্থ খুশি বা আনন্দ। কিন্তু ইসলামে তার ব্যাপ্তি নির্দোষ আনন্দের মাত্রা ছাড়িয়ে সীমাহীন নয়। ঈদুল ফিতর অর্থ হচ্ছে ফিতরার ঈদ অর্থাৎ ফিতরা প্রদানের মাধ্যমে যে আনন্দ। তাই এর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত রয়েছে পবিত্র রমযান মাস ও রোজার শিক্ষা। সেজন্যই হাদিসে নবী (সাঃ) বলেন, যারা রমযানের রোজা রাখেনা, তারা যেন ঈদের মাঠে না আসে। অর্থাৎ তাদের কোন ঈদ নেই। তাদের ঈদের আনন্দ করার কোন অধিকার নেই।

কারণ কী? আলস্নাহ একমাসব্যাপী সকলপ্রকার ইন্দ্রীয় সুখ ও পানাহার থেকে বিরত থেকে শুধুমাত্র ‘‘আলস্নাহভীতি’’ অর্জনের জন্যই রমযান মাসের রোজা বাধ্যতামুলক করেছেন। হাদীসে বলা হয়েছে- রোজা হচ্ছে যুদ্ধে আত্নরক্ষার ঢালস্বরূপ। প্রকৃতপক্ষে রোজার কঠোর সাধনার মাধ্যমে সকল প্রকার মানবীয় গুণাবলীর বিকাশ ঘটে এবং খারাপ অভ্যাসগুলো বিদুরীত হয়। একজন মুসলমান রোজা রেখে আরও উত্তম মুসলিমে পরিণত হবে-এটাই স্বাভাবিক। ফলে রোজার মাধ্যমে ক্ষুধার জ্বালাবোধ, অভাবী-গরীবদের দুঃখ-কষ্টবোধ, মানবতাবোধ, শৃঙ্খলাবোধ, দুস্থদের প্রতি সহমর্মিতা, সহানুভুতি ইত্যাদি জাগ্রত হতেই হবে। এটাই রোজার মূলশিক্ষা।

একজন রোজাদার সারামাস ইন্দ্রীয় সুখ-সম্ভোগ ও পানাহার পরিহার করে যে শিক্ষা অর্জন করে, তা বাকী এগারো মাস নিজের জীবনে সমুন্নত রাখতে পারলেই সে সফল। অন্যথায় তার রোজা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে বাধ্য। এ ব্যাপারে প্রচুর হাদীস রয়েছে। রোজার পুরস্কার তাই স্বয়ং আলস্না্হই দিবেন বলে প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছেন।। আর এ রোজা পালনের সফল উপসংহারের নামই হচ্ছে- পবিত্র ঈদুল ফিতর। মানে একমাসব্যাপী সাময়িক নিষিদ্ধ হালালকাজসমূহ আবারও চালু হলো এবং ঈদের আনন্দের মাধ্যমে ধুমধামের সাথেই এখন খাও, দাও এবং স্ফূর্তি করো। ঈদের কয়দিন তাই রোজা রাখা হারাম করা হয়েছে অর্থাৎ এ সময় রোজাদারদের আনন্দ-স্ফূর্তি করার জন্যই ঈদের আগমন।

কিন্তু সেই ঈদপালন যেন অমানবিক ও স্বার্থপরের মতো না হয়, তাই আলস্নাহ তায়ালা ফিতরার অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চালু করেছেন। মূলত গরীব-দুঃখীদের ঈদে একাত্ম করার জন্যই এ ফিতরার প্রচলন। ঈদের মাঠে যাবার আগে নিজ নিজ পরিবারের জীবিত সদস্যদের পক্ষ থেকে মাথাপিছু নির্দিষ্ট পরিমাণ (চাল বা গম) অর্থ বিলিয়ে দিতে হবে গরীবদের মাঝে, যাতে তারাও নতুন কাপড় পরতে পারে, আনন্দ-ফূর্তি করতে পারে। এদেশে বর্তমানে মাথাপিছু ফিতরার পরিমাণ হচ্ছে ৪০ টাকা মাত্র। ফিতরার টাকা যেহেতু গরীব-দুঃখীদের হক, তাই টাকাটা এমনিভাবে বন্টন করা উচিৎ যাতে একটা দুঃস্থ পরিবার সত্যিই ঈদের আনন্দে শরিক হতে পারে। নতুবা ভিক্ষার আদলে ফিতরার টাকা জনে জনে বিলিয়ে দিলে ফিতরার পুরো উদ্দেশ্য-লক্ষ্য আসলে অর্জিত হয় না, এ বিষয়টি আমাদের ভাবা দরকার।

কিন্তু আমাদের সমাজে আমরা কী দেখি। রোজা রাখুক বা না রাখুক জাঁকজমকের সাথে ঈদপালন করা চাই-ই। অথচ ঈদের আনন্দ হচ্ছে ত্যাগের মাধ্যমে নির্দোষ ও পবিত্র আনন্দ। কিন্তু আমরা কীরকম আনন্দ করি? যা রোজার শিক্ষার ধারে কাছেও যেতে পারে না। বর্তমানে ঈদের আগে-পরে গরীব দুঃখীদের তেমন একটা ভাগ্য পরিবর্তনও হয় না। যেমন এতিমশিশুটির ক্ষেত্রে তার ভাগ্যই বদলিয়ে দিয়েছিলেন নবী (সাঃ)। তিনি তাকে বলেছিলেন, ‘‘ আজ থেকে তুমি এতিম নও। আমি তোমার বাবা আর আয়েশা (রাঃ) তোমার মা।’’ তাই আমরাও কি গরীব দুঃখীদের দুদর্শালাঘবে নবীর (সাঃ) অনুসরণে মা-বাবার ভূমিকায় নামতে পারি না?

30.5.11


এইডস্ থেকে বাঁচুন-পবিত্র জীবনযাপন করুন
শাহ আলম বাদশা

          প্রবাসজীবনই শমসেরের কাল হলো। বাপ-মার মুখে হাসি ফুটাবার আশায় সে অনেক টাকা খরচ করে গিয়েছিল আমেরিকায়। কিন্তু মরণব্যাধি এইড্স তাকে বাঁচতে দিলো না। তিনবছরের মাথায় তাকে মরণাপন্ন অবস্থায় আসতে হলো দেশে। চিকিৎসাপত্র যা হবার বিদেশেই হয়েছে। কিন্তু আর বাঁচার সম্ভাবনা না থাকায় তাকে পাঠানো হয় দেশে। এভাবে পাচশ্চাত্যে সৃষ্ট এ রোগের ভাইরাস শমসেরের মতো অনেকেই আজ দেশে দেশে ছড়িয়ে যাচ্ছে।

          ১৯৫৯ সালে প্রথম ব্রিটেনে এক লোকের রক্তে এইড্সের ভাইরাস পাওয়া যায়। ১৯৭০-এর দশকে এটি আফ্রিকায় ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৮১ সালে একে মারাত্মক ব্যাধি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু ১৯৮৫ সালে হলিউড খ্যাত হাডসন এ রোগে মারা যাবার পর বিশ্বব্যাপী আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এর প্রথম আবির্ষ্কতা লুই পাস্ত্তর। আর AID's-এর পূর্ণ নাম হচ্ছে- Aquired Immune Deficiency Syndrome বা অর্জিত প্রতিরক্ষা ক্ষমতাহ্রাস উপসর্গমালা। এ রোগ মারাত্মক রেক্টো ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হয়। ভাইরাটির নাম HIV ev Human Immune Deficiency Virus, যা মানুষের দেহের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে ফেলে। ফলে মানুষ সহজেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।

          বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী বর্তমান বিশ্বের ১৬৪টি দেশে এইড্স রোগী আছে। আমেরিকা, হাইতি ও আফ্রিকায় এ রোগের ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটলেও এশিয়া মহাদেশের মধ্যে ভারতেই এ রোগের প্রকোপ সবচে বেশী। আশংকা করা হচ্ছে- ভবিষ্যতে এক্ষেত্রে ভারত আফ্রিকাকেও ছাড়িয়ে যাবে। বিশ্বে প্রতিদিন এইড্স আক্রান্ত হচ্ছে প্রায় ৭ হাজার লোক। প্রতিদিন মরছে প্রায় ৬ হাজার জন। আফ্রিকায় ১৫-২৪ বছর বয়সী প্রতি তিনজন তরুণীর একজন ও প্রতি ৭ জন তরুণের একজন এইডসে আক্রান্ত। পতিতাপ্রধান থাইল্যান্ডে এইডসের ইতিহাস উপমহাদেশে সবচে পুরনো। দেশটিতে এইড্স রোগী আছে প্রায় ৮ লাখ। যদিও বাংলাদেশ এখনও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় নেই; তবুও রোগের কোন ভৌগোলিক সীমানা থাকায় ভবিষ্যতে আমরাও আশঙ্কামুক্ত নই।

বাংলাদেশে প্রথম এ রোগ ধরা পড়ে ১৯৮৯। এ পর্যন্ত দেড়হাজার জনের দেহে HIV জীবাণু পাওয়া গেলেও চারশতজনের মতো এইড্স রোগী শনাক্ত হয়েছে, মারা গেছে ১৩০ জন। তাই আমাদের দেশে আগাম প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য এখনই সময়।

          এমন এক সময় ছিল যখন কুষ্ঠরোগের মতো এইড্সের নামও কেউ নিতে চাইতো না বা লজ্জা পেতো। এখন পরিবর্তিত অবস্থার প্রেক্ষাপটে লজ্জা-ভয় ছেড়ে এইড্সের কারণ ও প্রতিরোধ ব্যবস্থার কথা আমাদের স্বার্থেই আমাদের সুস্পষ্টভাবে জানতে হবে এবং মানতে হবে। এইড্স রোগের মারাত্মক দিক হলো- প্রথমে রোগী বুঝতেই পারে না যে, সে এইড্সে আক্রান্ত। যখন জানে তখন আর করার কিছুই থাকে না।
         
            যৌনমিলনের মাধ্যমেই সবচে বেশি মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়। পশুগামিতা, বহুগামিতা, সমকামিতা ইত্যাদি বিকৃত যৌনাচারের কারণেই এ রোগের উৎপত্তি বলে ধারণা করা হয়। কেননা আমেরিকার একপ্রকার বানর থেকে এর জীবাণু ছড়ায় বলে সন্দেহ করা হয়ে থাকে। পাশ্চাত্যের ফ্রি-সেক্স বা কুকুর, ঘোড়া, গরু, ছাগল, বানরসহ অন্যান্য পশু-পাখির সাথে হর্সকক, ডগকক, মাংকিকক নামের আড়ালে নোংরা যৌনাচারই এজন্য দায়ী বলে অনেকে মনে করেন। কেননা এটি একটি নতুন রোগ, যা আগে কখনোই ছিল না। তাই তো হাদিসে বলা হয়েছে- ‘এমন এক সময় আসবে যখন নতুন নতুন মারাত্মক ব্যাধি সৃষ্টি হবে-যার নাম মানুষ এর আগে কখনো শোনেনি।’ যৌনমিলনের মাধ্যমে ৮০-৯০ শতাংশ মানুষ এইড্সে আক্রান্ত হয় বলে গবেষণায় জানা গেছে। তাই এ রোগের বিস্তৃতিরোধ করার সবচে বড় উপায় হলো পবিত্র ও নিয়ন্ত্রিত যৌনমিলন এবং জীবনযাপন।

ইসলাম ধর্মের বাস্তব ও বিজ্ঞানসম্মত আচার-আচরণ মেনে চললে সম্পূর্ণ এইড্সমুক্ত থাকাও সম্ভব বলে আজ গবেষকসহ বিজ্ঞানী এবং রোগ বিশেষজ্ঞরাও পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এজন্যই জাতিসংঘসহ বিশ্বসংস্থাসমূহ এখন যৌনমিলনের ক্ষেত্রে কঠিন সতর্কতারোপ করার পক্ষপাতি। এইড্স আক্রান্ত স্বামী বা স্ত্রীর যথাযথ চিকিৎসার পাশাপাশি যৌনমিলনে কনডম বা অন্যকান প্রতিরোধব্যবস্থা গ্রহণ না করার মানেই হলো এতে আরেকজনের আক্রান্ত হওয়াকে নিশ্চিত করা। তাই সর্বোচ্চ সতর্কতা হিসেবে অবশ্যই যৌনমিলনে কনডম ব্যবহার করতে হবে। এইড্স আক্রান্ত মায়ের দুধ পান করলেও শিশুর এইড্স হবে, এইড্স আক্রান্ত রোগীর রক্ত সুস্থ মানুষ গ্রহণ করলে তারও এইড্স হতে বাধ্য। এইড্স রোগীর ব্যবহৃত সূঁচ-সিরিঞ্জ জীবাণুমুক্ত না করে সুস্থদেহে পুশ করলে সংশি­ষ্ট ব্যক্তিরও এইড্স হবে। এইড্স আক্রান্ত ব্যক্তির অঙ্গ কোন সুস্থ ব্যক্তির দেহে প্রতিস্থাপন করলে তার এইড্সে আক্রান্ত হওয়াও অবধারিত।

          এইড্স আক্রান্ত রোগীর পূর্বলক্ষণ হচ্ছে-ওজন ১০% এরও বেশী কমে যাওয়া, দীর্ঘমেয়াদি পাতলা পায়খানা, একমাসের বেশী শুকনো কাঁশি, সারাদেহে চুলকানিজনিত চর্মরোগ, মুখ ও গলায় অাঁঠালো ফেনাযুক্ত একপ্রকার ঘা হওয়া, নাসিকাগ্রন্থি ফুলে যাওয়া, স্মরণশক্তি ও বুদ্ধিমত্তা কমে যাওয়া, ক্লান্তি ও ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়া, একমাসের বেশী জ্বর বা জ্বরজ্বরভাব ইত্যাদি। তবে পরীক্ষায় নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত এসব লক্ষণই চূড়ান্ত বিষয় নয়। এজন্য সন্দেহ হলে রক্ত পরীক্ষা করা যেতে পারে। নবসৃষ্ট এ মরণব্যাধিকে প্রবাসী রোগ বললেও অত্যুক্তি হবেনা ; তাই যারা প্রবাসী পাত্রের জন্য লালায়িত ও পাগলপারা তাদের সর্বোচ্চ সতর্কতারোপ করা উচিৎ যে, সৎ, সুস্থ ও নিরোগ পাত্র অগ্রাধিকার দেবেন নাকি প্রবাসী পাত্রের আশায় এইড্সকে স্বাগত জানাবেন?

          বর্তমানে দেশে বড় বড় সব হাসপাতালেই এইচআইভি/এইডসের ভাইরাস পরীক্ষার ব্যবস্থা আছে। বাংলাদেশের মতো মুসলিম প্রধান দেশে জনগণ এখনও পবিত্র ও নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন এবং যৌনাচারে অভ্যস্ত। কিন্তু ইন্টারনেটের বদৌলতে সম্প্রতি নিষিদ্ধ তালিকাভুক্ত ৮৪টি দেশীয় ওয়েবসাইট ছাড়াও সেক্সসংক্রান্ত ওয়েবসাইটগুলোর প্রভাবে এদেশের তরুণ-তরুণীদের একাংশ আজ মারাত্মক এইডসের ঝুঁকিতে আছে। বিভিন্ন ক্লাব নাইটক্লাব, হোটেলসহ বিভিন্ন গোপন আস্থানায় যেভাবে পাশ্চাত্যের অনুকরণে বিকৃত যৌনাচার সংঘটিত হচ্ছে, তাতে ভবিষ্যতে আমরাও ভয়াবহ এইড্সের আশঙকামুক্ত নই। তাই আমাদের স্বার্থেই আমাদের জনজীবন রক্ষার তাগিদে সকল প্রকার বস্নুফিল্ম, পর্নোসিডি, পর্নোপত্রিকা ইত্যাদিসহ যৌনব্যবসায় অর্থাৎ পতিতালয়, ভ্রাম্যমান পতিতাবৃত্তি, সেক্সগাল,র্ কলগার্ল নামের আড়ালে অসামাজিক ও অবৈধ কাজের বিস্তৃতিরোধ করতেই হবে। এসব বন্ধ করে সংশিস্নষ্টদের সামাজিক পূণর্বাসনের মাধ্যমে সমাজকে অবশ্যই পরিশুদ্ধ করতে হবে। অন্যথায় এইডসের হাত থেকে মুক্তি পাবার কোন আলাদীনের চেরাগ কোন বৈজ্ঞানিকের হাতে নেই, একথা মনে রাখতে হবে।
=০=








জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ আদৌ ইসলামসম্মত নয়
শাহ আলম বাদশা

রাষ্ট্র ও সমাজে ইসলামের পূর্ণাঙ্গ প্রতিষ্ঠাতা ও বাস্তবায়নকারী হজরত মুহম্মদ কর্তৃক আল কুরআনের আলোকে আই-ইয়ামে  জাহেলিয়াত বা অন্ধকারযুগকে নজিরবিহীন এক স্বর্ণযুগে রূপামত্মরের ইতিহাস জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে কমবেশি সবারই জানা আছে। নবী (সা:) এর জীবদ্দশায় এবং চার খলিফার রাজত্ব থেকে শুরম্ন করে আজ পর্যমত্ম পৃথিবীর ইতিহাসে আত্মরক্ষামূলক প্রতিরোধযুদ্ধ ব্যতীত বিচ্ছিন্নভাবে সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ বা কোনরূপ সন্ত্রাসের প্রতি ইসলামধর্ম বা তার নবী অথবা মুসলমানদের সমর্থনের নজির কেউ কখনো হাজির করতে পারবে না। এমনকি ভারত উপমহাদেশের ইতিহাসেও ইসলামধর্মের নামে জঙ্গিবাদ, তথাকথিত বোমাবাজী, নির্বিচারে মানুষহত্যা বা জঙ্গিবাদের কোন উদাহরণ নেই। শুধু তাই-নয়, স্বাধীনতার ৩৮ বছরের ইতিহাসে দেশের পরিচিত ইসলামী দল বা ধর্মভীরম্ন আলেম-ওলামা এবং মুসলমানদের বিরম্নদ্ধেও কখনো জঙ্গিবাদের অপবাদ শোনা যায়নি।

কারণ সন্ত্রাসবাদ বা জঙ্গিবাদের পক্ষে ইসলামের একবিন্দু সমর্থন অতীতেও ছিলনা বা এখনো নেই এমনকি সাম্প্রতিককালে ধর্মের নামে জঙ্গিবাদের ধারণাও বিশ্বের মুসলমানদের কাছে একদমই অভিনব অন্তত: বাংলাদেশের লোকদের কাছে তো বটেই। বস্ত্ততপক্ষে  ইসলাম জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে শামিত্মপূর্ণ সহাবস্থানের পক্ষেই অনড় বলে ধর্মের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করতেও সম্পূর্ণ নিষেধ করেছে। এর সমর্থনে ইতিহাসে নজিরবিহীন সব কাহিনী লিপিবদ্ধ রয়েছে, যা অনেকেরই জানা থাকার কথা। তন্মধ্যে একটি উলেস্নখযোগ্য ঘটনা হচ্ছে, হজরত ওমর (রা) এর সময় এক মুসলিম সৈনিক গোপনে বিধমীদের এক মূর্তির নাক ভেঙ্গে ফেলায় খলিফার কাছে নালিশ আসে। পক্ষপাতহীন তদন্তসাপেক্ষে ওই সৈনিককে চি‎‎‎হ্নত করার পর ওমর (রা) অপরাধীকে অভিযোগকারীর হাতে তুলে দিয়ে তারও নাক কেটে নেয়ার নির্দেশ দেন। অন্য ধর্মের প্রতি বাড়াবাড়ির বদলে নজিরবিহীন ন্যায়বিচার দেখে ততক্ষণাৎ অভিযোগকারী ক্ষমা করে দেন ওই সৈনিককে।

এটাই ইসলামের প্রকৃত রূপ এবং ইসলাম যে সন্ত্রাসের ঘোরবিরোধী, তা আল কুরআনেও বলা আছে এভাবে, ‘‘যারা সমাজে সন্ত্রাস ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, তোমরা পরস্পর বিপরীতদিক থেকে তাদের হাত ও পা কেটে দাও।’’ হাদিসে বলা হয়েছে ‘‘যার হাত ও মুখ থেকে অন্যরা অনিরাপদ, সে মুসলমানদের অমত্মর্ভূক্ত নয়।’’ এধরণের অসংখ্য কুরআন-হাদিসের বাণী উপস্থাপন করা যায়, যা জঙ্গিবাদের মুলোৎপাটনেরই সমার্থক। তাছাড়া, ইসলামে শিয়া-সুন্নি, হানাফি, শাফিঈ, হাম্বলী এমনকি বিতর্কিত কাদিয়ানী, বাহাই প্রভৃতি মতবাদ নিয়ে আকাশ-পাতাল মতপার্থক্য থাকলেও বিনাবিচারে মানুষহত্যা এবং ধর্মের নামে সন্ত্রাসবাদ যে সম্পূর্ণ ইসলামবিরোধী, এব্যাপারে কিন্তু কারম্নরই কোনো দ্বিমত বা মতাপার্থক্য নেই। আসলে মসজিদে জুতাচোররা টুপি-পাঞ্জাবীপরা থাকলেও যেমন চোর, তেমনি ইসলামের নামে সন্ত্রাসকারীরাও জনবিচ্ছিন্ন সন্ত্রাসীগোষ্ঠী, এটাই ইসলামের কথা আল কুরআনের বক্তব্য। এজন্যই হাদিসে বলা হয়েছে যে, পরকালে বিভ্রামত্ম আলেমদের শাসিত্ম হবে সবচে বেশি ও মর্মন্তুদ। তাই বলা বলা চলে, দাঁড়ি-টুপিধারী জঙ্গিবাদের ধারক-বাহকরা প্রকৃতপক্ষে মাওলানা, আলেম, মুফতি, হাফেজ নামধারী হলেও বিভ্রামত্ম মুসলিমমাত্র।

তবে খুব আশার কথা যে, এসব জঙ্গি বা সন্ত্রাসীর পেছনে যেমন কুরআন-হাদিসের সমর্থন নেই; তেমনি এদেশের প্রকৃত আলেম-ওলামা, ইসলামীদলসহ সাধারণ মুসলমান এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের কোন দরদও নেই। সর্বসাধারণ এবং আলেমদের সচেতনতা ও জঙ্গিবাদবিরোধী মনোভাবের দরম্ননই সরকার দ্রম্নততম সময়ে শায়খ আবদুর রহমান, বাংলা ভাই, মুফতি হান্নানসহ জঙ্গি নেতাদের ধরতে সক্ষম হয়েছে। এমনকি ইতোমধ্যে কারো কারো মৃতুদন্ড কার্যকর করা হয়েছে।


হিন্দু-মুসলমান, খৃষ্টান, বৌদ্ধসহ অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরা যুগ যুগ ধরে এদেশে সহাবস্থান করলেও ধর্মের আলখেলস্নায় জঙ্গিবাদের মুখোমুখি হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে এই প্রথম। যতদূর জানা যায়, হরকাতু জিহাদ নামের জঙ্গি সংগঠণের আড়ালে মুফতি হান্নান কর্তৃক ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যই সর্বপ্রথম বিশালাকার ৭৬কেজি ওজনের বোমা পূঁতে রাখা হয়েছিল। এভাবে ২০০৫ সালের ২১ আগস্ট বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে হত্যাপ্রচেষ্টা, ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর বোমাহামলা, উদিচীর অনুষ্ঠানে বোমাহামলা, একযোগে সারাদেশে বোমাহামলাসহ অসংখ্য সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ইতোমধ্যে বাংলাদেশে ঘটেছে এবং বহু নিরীহ মানুষ আহত-নিহত হয়েছেন, যার জন্য দায়ী ইসলামের ছদ্মবেশধারী জঙ্গিরাই।

বাংলাদেশে বহু ইসলামী দল থাকলেও তাদের বিরম্নদ্ধে হঠাৎ গজিয়ে ওঠা জেএমবি, জেএমজেবি, হরকাতুল জিহাদসহ নিষিদ্ধ ঘোষিত সন্ত্রাসী দলগুলোর মতো জঙ্গিবাদের অভিযোগ ইতিপূর্বে শোনা যায়নি। কোনো কোনো দল বা তার নেতাদের বিরম্নদ্ধে স্বাধীনতাবিরোধীতা বা যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ থাকলেও ইসলামের নামে জঙ্গিবাদের প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি। কিন্তু ভূঁইফোড় এসব অখ্যাত সন্ত্রাসী, বোমাবাজ-জঙ্গিবাদী সংগঠন ও নেতাদের ইসলামী নামের পাশাপাশি মাওলানা, শায়খ, মুফতি, হাফেজ ইত্যাদি কারণে মুসলমান-অমুসলমানদের মধ্যে পবিত্র ইসলামধর্ম এবং কোরআন-হাদিস সম্পর্কেও সন্দেহ-বিভ্রামিত্মর সৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষত: নবপ্রজন্মরা এক্ষেত্রে বেশ বিভ্রান্ত। কেউ কেউ আবার ইচ্ছায় হোক-অনিচ্ছায় হোক পাশ্চাত্যের অনুকরণে ‘‘ইসলামী জঙ্গিবাদ, ইসলামী সন্ত্রাসবাদ’’ ইত্যাদি  আবিষ্কারের মাধ্যমে পবিত্র ইসলামের গায়ে কলঙ্কলেপণেরও চেষ্টা করে থাকেন, যা সঠিক নয়। কেননা ইসলাম-ইসলামই আর জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ, সন্ত্রাসবাদই। অস্ত্রধারী পুলিশ আর ডাকাতের মধ্যে যেমন তফাৎ আছে তেমনি সুস্পষ্ট পার্থক্য হচ্ছে ধর্মভীরম্ন মুসলমান আর জঙ্গিবাদীদের মধ্যে, একথা ভুললে চলবেনা। সব ধর্মাবলম্বীদের ক্ষেত্রেই একথা খাটে।

কথায় বলে, চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনী। তেমনি সন্ত্রাসীর কোন দল নেই, ধর্মও নেই। যদি তা-ই না হতো, তাহলে এদেশের প্রথিতযশা ধর্মীয় গুরম্ন আলেম-ওলামারাই সর্বাগ্রে সন্ত্রাসী হতেন, বোমাবাজ ও জঙ্গিবাদী হতেন। কিন্তু এমন ঘটনা কখনো এদেশে ঘটেনি। কিন্তু তাই বলে, ধর্মের পোশাকপরিহিত গুটি কয়েক জঙ্গিবাদীর কারণে শান্তি-সহাবস্থানের ধর্ম, সহানুভহতি ও মানবতার ধর্ম ইসলাম সম্পর্কে হাজার বছর ধরে লালিত বিশ্বাস-ধারণা এবং অভিজ্ঞতা কি একমূহুর্তেই মিথ্যে হয়ে যেতে পারে? প্রকৃতপক্ষে এদেশের মূলধারার আলেম-ওলামাসহ সাধারণ জনতার সন্দেহ ও বিশ্বাস হচ্ছে, পবিত্র ইসলামধর্মকে বিতর্কিত-সন্দেহযুক্ত করার মানসে এবং নবপ্রজন্মকে ইসলাম সম্পর্কে ভুলধারণা প্রদানের মাধ্যমে ইসলামবিরোধী করে গড়ে তোলার পাশাপাশি সরকারকে বেকায়দায় ফেলার সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য নিয়েই এসব জঙ্গি কারো ক্রীড়নকের কাজ করছে মাত্র।

তাই ইসলামবিরোধী এসব সন্ত্রাসীর মুখোশ উন্মোচন এবং এদের আইনের হাতে সোপর্দ করার দায়িত্ব দেশপ্রেমিক জনতার। ধর্মের নাম ভাঙ্গিয়ে কেউ যেন আর এধরণের সন্ত্রাস চালাতে না পারে, সেদিকে সকলকে সচেতন থাকতে হবে। এমনকি এসব জঙ্গিকে ধরিয়ে দিলে একদিকে যেমন ধর্মের বদনাম ঘুচবে তেমনি মানবতা, দেশ ও জাতির বিরাট খেদমত করা হবে। কেননা হাদিসে বলা হয়েছে যে, দেশপ্রেম হচ্ছে ঈমানের অংশ! নবী সাঃ এও বলেছেন, ‘‘কারো সামনে অন্যায়-জুলুম সংঘটিত হলে সে যেন তা শক্তিদ্বারা প্রতিহত করে। এতে অপারগ হলে সে যেন এর প্রতিবাদ করে। এটাও না পারলে যেন মনে মনে ঘৃণা করে আর এটা হচ্ছে দূর্বলতম ঈমানের লক্ষণ।’’ আর পবিত্র কুরআনের ঘোষণা হচ্ছে - ‘‘ যে কাউকে বিনা বিচারে হত্যা করলো, সে যেন গোটা মানবজাতিকে হত্যা করলো। আর যে কারো প্রাণ রক্ষা করলো সে যেন সমগ্র মানবজাতিকে রক্ষা করলো। (আল মায়েদা-)

                                                           


কন্যাশিশু ও নারীনির্যাতন এবং তাদের যৌননিরাপত্তা
   শাহ আলম বাদশা
         
ডাক্তার গৃহকত্রীর নির্মম নির্যাতনে ছোট্ট গৃহকর্মী রুবি এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বয়স ১২ কি ১৩ হবে। গরম খুনতির ছ্যাঁকা আর নির্মম পিটুনির দগদগে দাগ ওর সারা শরীরে। পুলিশের কাছে ওর প্রদত্ত জবানবন্দীর সারমর্ম হচ্ছে--একবছর যাবৎ সে চারসদস্যবিশিষ্ট ওই ডাক্তার দম্পতির বাসায় গৃহকমীর কাজে নিয়োজিত। কী শীত, কী গ্রীষ্ম, হঁড়ি-পাতিল মাজা, ঘরদোর ঝাঁড়ু দেয়া ও মোছা, কাপড় কাচা এবং তিনবেলা  নাস্তা ও খাবার পরিবেশন করতে হতো ওকে। কোন অবসর দেয়া হতো না। কাজের ফাঁকে বা অবসরে তাদের সাথে বসে বা পাশে দাঁড়িয়ে কখনো টিভি দেখলেও খেঁকিয়ে উঠতেন গৃহকর্ত্রী সোমা। শিশুসুলভ আচরণের দরুণ কখনো টিভিরুম ছেড়ে যেতে একটু দেরি হলেই গালে-মুখে চড়-থাপ্পড় অথবা চুলধরে কিল-ঘুষি মারতেন তিনি। কখনো কখনো তার স্কুলপড়ুয়া দু‘ছেলে-মেয়েকেও লেলিয়ে দিতেন ওকে মারার জন্য।  আর যদি ওর হাত থেকে কোন জিনিস, তরকারি পড়ে বা ভেঙ্গে যায়, তাহলে ততক্ষণাৎ গায়ে গরমপানি ঢেলে দেয়া, শরীরে ছ্যাঁকা দেয়াছাড়াও হাতের কাছে যা পাবেন তা-ই দিয়ে শুরু করবেন বেদম পিটুনি। সে সময় ডাক্তার গৃহকর্তা বাসায় উপস্থিত থাকলে তিনি সরাসরি বাধা দিতেন বা পুলিশের ভয় দেখিয়ে ওকে উদ্ধার করতেন।

নিজের সন্তানদের মতোই একজন রক্ত-মাংসের শিশু হিসেবে গৃহকর্ত্রী কখনো আদর করতেন না ওকে বা নিজের  সন্তানদের মতোন ওর দোষ কিংবা ভুল হলেও ক্ষমা করতেন না। গৃহকর্তা এক্ষেত্রে ভালো মানুষ ছিলেন।

এ গেলো চিত্রের একপিঠ, আবার অপরপিঠও আছে। গৃহকর্তা বা তার সন্তান কর্তৃক কাজের মেয়েকে ধর্ষণ, হত্যা অথবা প্রলোভিত করে গর্ভবতী করার মত ঘটনাতো বাংলাদেশে নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যাপার। এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রী, পথচারী কিশোরী- সুন্দরী নারীদের প্রকাশ্যে উত্যক্ত করার পাশাপাশি অবুঝ শিশুদেরও প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে ধর্ষণ-হত্যার ঘটনা কার না জানা? রিমি, সিমি, স্বপ্নাসহ নাম নাজানা আরো অনেক মেয়ের আত্মহত্যা বা অপমৃত্যুর কথা হয়তো এখনো অনেকের স্মরণ থাকার কথা। ইদানিং আবার মোবাইলে নারীনির্যাতনের বিষয়টিও নবমাত্রা যোগ করেছে। ইভটিজিং বা প্রকাশ্যে অশ্লীলতা প্রদর্শন, উত্যক্তকরণের সঙ্গে শুধু মফস্বল বা গ্রাম-গঞ্জের মেয়েরাই আজ পরিচিত নয় বরং রাজধানীর মেয়েরাও এর শিকার হয় মারাত্মকভাবে।

মেয়েদের উত্যক্তকরণের বিরুদ্ধে সরাসরি কোন আইন না থাকলেও নারী ও শিশুনির্যাতন দমন (সংশোধন) আইন-২০০৩ এর আওতায় এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নেয়া যায়। নারী ও শিশুনির্যাতন দমন আইন-২০০৩ অনুসারে কোন নারী সম্ভ্রমহানীর কারণে আত্মহত্যা করলে, আত্মহত্যার প্ররোচনার দায়ে অপরাধীকে শাস্তি দেওয়ার বিধান রয়েছে।

কিন্তু অপরাধ প্রমাণের ঝামেলা, বিচারপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রিতা, আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণের ফলে আরো বেশি নিরাপত্তাহীনতা বা হয়রানির আশংকা, সামাজিক লজ্জা ইত্যাদির দরুণ অধিকাংশক্ষেত্রেই অভিভাবকগণ আইনের আশ্রয় নিতে আগ্রহী হননা। ফলে বখাটেরা দ্বিগুণ উৎসাহে এ সকল কাজ করতে থাকে। কিন্তু অভিভাবকগণ ন্যায়বিচার প্রাপ্তিসহ দ্রতবিচারসম্পন্নের আশ্বাস এবং নিশ্চয়তা পেলে হয়তো আইনগত প্রতিরোধ ও প্রতিকারে এগিয়ে আসতে আগ্রহী হবেন। বাংলাদেশের দন্ডবিধি অনুযায়ীও এ ধরণের অপকর্মের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব। দন্ডবিধির ২৯৪ নং ধারানুযায়ী, যদি কোন ব্যক্তি অন্যকে বিরক্ত করার উদ্দেশ্যে প্রকাশ্যস্থানে অশ্লীল কার্যকলাপ বা অশ্ল­ীল গান, আবৃত্তি বা উচ্চারণ করে, তবে সে ব্যক্তি যেকোন বর্ণনায় কারাদন্ড যার মেয়াদ ৩ মাস পর্যন্ত হতে পারে বা জরিমানা বা উভয়দন্ডে দন্ডিত হবে। দন্ডবিধির ৫০৯ নং ধারামতে, যদি কোন ব্যক্তি কোন নারীর শালীনতার অমর্যাদা করার উদ্দেশ্যে কোন মমত্মব্য করে বা কোন শব্দ বা অঙ্গভঙ্গি করে বা কোন বস্ত্ত প্রদর্শন করে, তবে সে ব্যক্তি বিনাশ্রম কারাদন্ড যার মেয়াদ ১ বছর হতে পারে বা জরিমানা বা উভয়বিধ দন্ডে দন্ডিত হবে। নারীদের উত্ত্যক্ত করার ক্ষেত্রে বিধান আছে তিনমাস বা ১ বছরের কারাদন্ড কিংবা দু’হাজার টাকা জরিমানা।

চাকরি ও কর্মক্ষেত্রে নারীরাসহ স্কুল-কলেজ বা ভার্সিটিতেও ছাত্রী-নারীসহকর্মীরাও অনেকক্ষেত্রে মানসিক ও যৌননির্যাতনের শিকার, যা অধিকাংশ ক্ষেত্রে নানাকারণে অগোচরে থেকে যায়। কর্মজীবী সুন্দরী ও আকর্ষণীয় নারী বিশেষত যুবতীরা অনেক ক্ষেত্রে তাদের বস্ বা উর্ধ্বতন কর্মকর্তার দ্বারাও যৌননির্যাতনের শিকার হন। স্কুল-কলেজে সহপাঠি এমনকি শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রী-উত্যক্তকরণ, ধর্ষণ ইত্যাদির ঘটনায় তো ঢাকার বিভিন্ন ভার্সিটি বেশ কুখ্যাতি অর্জন করেছে। একসময় ঢাকা ভার্সিটির নেতৃস্থানীয় ছাত্র কর্তৃক ছাত্রীধর্ষণের সেঞ্চুরিপালনের মত সদম্ভ ঘোষনাও পত্রিকান্তরে শুনতে হয়েছে এ জাতিকে, কী দুর্ভাগ্য আমাদের! কিন্তু শতাধিক ছাত্রীর সম্ভ্রম ও জীবন-মান ধ্বংস করার পরও সেই নরপশুর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়েছে কি? যদি তা হতো, তবে আজ ধর্ষিতা- নির্যাতিতা মেয়েদের অভিাবকরা লুকিয়ে লুকিয়ে না কেঁদে নিশ্চয়ই দলে দলে আইনের আশ্রয় নিতে লাইন দিতো।

এটা ঠিক যে, অপরাধীকে শাস্তি দেয়ার জন্যই হরেকরকম অপরাধদমণ আইন-কানুন তৈরি হয়েছে এবং শিশু- নারীনির্যাতনকারীদের আইনি প্রক্রিয়ার হাত থেকে রেহাই দেয়াও যাবেনা। তবে এও স্বতসিদ্ধ ও প্রমাণিত সত্য যে, নিছক আইনের মাধ্যমেই এ সামাজিক অবক্ষয়মূলক অপরাধদমন পুরোপুরি সম্ভব নয়। এসব অপরাধের বিরম্নদ্ধে ব্যাপকভিত্তিক সামাজিক গণসচেতনতা সৃষ্টি, ধর্মীয় মূল্যবোধ সৃষ্টির জন্য ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা, নারীদের আত্মরক্ষামূলক কুংফু-জুডো, কারাটে, মার্শাল আর্ট প্রভৃতি ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে ক্ষমতায়ণ করাও জরুরি। এজন্য শিক্ষার হার শতভাগে উন্নীত করা একান্ত আবশ্যক। বিশেষত নারীদের সুশিক্ষিত ও উচ্চশিক্ষিত করার পাশাপাশি ধর্মীয় শিক্ষায়ও উপযুক্ত করা দরকার, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হিসেবে তাদের সমত্মানরা তাদের কাছেই মাতৃজাতি হিসেবে নারীদের যথাযথ সম্মানদানের সুশিক্ষা পায়। এক্ষেত্রে নেপোলিয়নের কথাটি প্রণিধানযোগ্য, ‘তোমরা আমাকে একটি ভালো মা দাও, আমি তোমাদের একটি উত্তম জাতি উপহার দেবো।’

আর ইসলামের ইতিহাসের সেই কাহিনীও এখানে স্মরণযোগ্য, নবপ্রতিষ্ঠিত খোলাফায়ে রাশেদীনের যুগে একজন বিধর্মী যুবতী নারী যেকোন কারণেই হোক একাকী দীর্ঘ নির্জনপ্রান্তর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল আর সম্ভ্রমহানীর ভয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা  করছিল। এমন সময় তার বিপরীত দিক থেকে একজন মুসলিম পুরুষকে আসতে দেখে সে ধর্ষণ ও নিরাপত্তাহীনতার আতঙ্কে হঠাৎ বসে পড়ে থর্থরে কাঁপতে থাকে। কিন্তু ‘মা, আপনি কোথায় যাবেন, আপনার কোন ভয় নেই’--লোকটির ব্যতিক্রমী ও অভূতপূর্ব অভয়বাণী শুনে যুবতী বিশ্বাস করতেই পারছিল না যে, ইসলামের ছোঁয়ায় নারীধর্ষক ও হত্যারক পশুগুলো আজ আর আগের চরিত্রে নেই, পরিণত হয়েছে মহামানবে।

প্রকৃত ধর্মশিক্ষা অমানুষ-পশুকেও এরূপ মানবতাবাদী উত্তম মানুষে পরিণত করে থাকে। তাই, আমরা সকলে মিলে নিজ নিজ আবস্থান থেকে যদি এ ব্যাপারে ব্যাপক গণসচেতনতাসৃষ্টি করি, শিশু ও নারীনির্যাতনরোধে পাড়ায় পাড়ায় প্রতিরোধ কমিটি গড়ি, ইভটিজিং প্রতিরোধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলি; তাহলেই নারী ও শিশুদের জন্য একটি স্বর্গীয় অভয়ারণ্য বিনির্মাণ করা সম্ভব হবে

 দৌলতদিয়া যৌনপল্লী
নারী-শিশুদের অসামাজিক জীবনের অবসান চাই?
শাহ আলম বাদশা

পতিতাবৃত্তি বা যৌনপেশা একটি ঘৃণ্য অথচ আদিম পেশা, যা নারীকে সামাজিক স্বীকৃতিহীন ভোগ্যপণ্য ও যৌনযন্ত্র হিসেবেই মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য করে থাকে। কোন সমাজ এবং ধর্মেই এ পেশার স্বীকৃতি ও মর্যাদা না থাকলেও স্বার্থান্বেষীমহল কর্তৃক পেশাটি একবিংশ শতাব্দীর চরম উৎকর্ষের যুগেও বিস্ময়করভাবে টিকে আছে। আধুনিক সমাজ যৌনপেশায় নিয়োজিত মানবেতর নারীদের শ্রেষ্ঠজীব হিসেবে সমাজে পুনর্বাসিত কিংবা প্রতিষ্ঠিত করতে সম্পূর্ণরূপেই ব্যর্থ হয়েছে বলা যায়।

অবশ্য ইসলামধর্ম নারীকে যৌনদাসত্বের হাত থেকে রক্ষা করেছে পবিত্র বিবাহবন্ধনের মাধ্যমে সামাজিক ও এইড্সমুক্ত জীবনযাপনের সুযোগ দিয়ে। আর পশু-পাখিদের মত অবাধ যৌনসম্পর্ককে করেছে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ও নিরুৎসাহিত। কেননা মানুষের মধ্যে মনষ্যত্ব ও পশুত্ব- এ দু’গুণের স্বাভাবিক সমন্বয় থাকলেও মনুষ্যত্বের কারণেই সে আজ শ্রেষ্ঠত্বের আসনে সমাসীন। মানবসমাজে মনুষ্যত্ব ব্যতিরেকে পশুত্বকে লালন করার যেমন কোন সুযোগ নেই, তেমনি নেই এর স্বীকৃতিও। তাই পশু-পাখি ব্যতীত মানুষের বিবাহবহির্ভূত যৌনসম্পর্ক কোন ধর্ম ও সমাজেই আজ পর্যন্ত স্বীকৃত হয়নি। তথাপিও পতিতাবৃত্তির মত এই বিষবৃক্ষটি আধুনিক নানা ছদ্মাবরণে শাখা-প্রশাখায় যেন বেড়েই চলেছে। আর আমাদের মত দরিদ্র ও অনুন্নত সমাজে পেশাটি দেশ-জাতি এমনকি সরকারের জন্যও মারাত্মক বিব্রতকর এবং ক্যান্সারসমতুল্য।

এ পেশা সামাজিক ও স্বাভাবিকভাবে ভদ্র নারীদের জন্যও কম মান-মর্যাদাহানীকর এবং লজ্জাষ্কর নয়। তাই কেউই চায়না এমন জীবন ও স্বাস্থ্যহানীকর মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ নোংরা পেশা সমাজে জিইয়ে থাকুক। কোন পুরুষই তার নিজের মা-বোন বা সন্তানদের এ পেশায় নিয়োজিত করার কথা কল্পনা না করলেও কিছু বিকৃত মানসিকতাসম্পন্ন পুরুষ এখনো কিন্তু এ পেশার পক্ষে বেশ সোচ্চার, যা বিষ্ময়কর বৈকি? ইসলামধর্ম তাই এধরণের মানবেতর জীবনে নিপতিত নারী ও শিশুদের চায় সুস্থ-স্বাভাবিক জীবন এবং সামাজিক পুনর্বাসন। 

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদও দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর নারী ও শিশুদের মানবেতর জীবন-যাপনের হাত থেকে উদ্ধারের মাধ্যমে তাদের পুনর্বাসনপ্রক্রিয়ায় অংশ নিতে এগিয়ে আসায় জাতি আশার আলো দেখছে।  রাজবাড়ি জেলার দৌলতদিয়া যৌনপল্লিটি দেশের বৃহত্তম একটি যৌনপল্লী, যা ঐ এলাকার জন্য অত্যন্ত বিব্রতকর। শিশু, কিশোরী, মাঝবয়সী ও বৃদ্ধাসহ কয়েক হাজার যৌনকর্মীর বাস এখানে। বিশেষত এখানকার অসামাজিক ও নিরাপত্তাহীন পরিবেশে বেড়ে উঠছে শত শত নিস্পাপ শিশু এবং বাড়ন্ত কিশোরীদেরও বাধ্য করা হচ্ছে পতিতাবৃত্তিতে।

এমনকি যৌনপেশায় উপযুক্তকরণের জন্য অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের পশু মোটা-তাজাকরণ বড়ি খাইয়ে হলেও ঠেলে দেয়া হচ্ছে এ নোংরা পেশায়! পশুদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি এসব ট্যাবলেট মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। এসব বড়ি ক্যান্সারসহ জীবনঝুঁকি দ্রুত বাড়ায়, যা দেশের স্বাস্থ্যসমস্যাকে আরও প্রকট করে তুলছে। অথচ এদিকে নজর দেয়ার কেউ নেই। এখানে কারুর জন্য নেই কোন স্বাস্থ্যসেবা। মাদক, সন্ত্রাসসহ নানা দুর্নীতির সাথে জড়িত দেশ-জাতির জন্য ক্ষতিকর দালালশ্রেণী, দাগী আসামী ও সন্ত্রীদের অভয়ারণ্যও হচ্ছে এই যৌনপল্লীটি।

শুধু তাই নয়, যৌনযন্ত্র ও পণ্যসেজে দেহবিক্রির মত অমানবিক কার্যক্রমে লিপ্ত নারী-শিশুদের আয়ের সিংহভাগও লুটেপুটে খায় আইন-শৃংখলা রক্ষাকারীবাহিনীর কিছু বিভ্রান্ত সদস্যসহ বিভিন্ন স্তরের মধ্যস্বত্বভোগীরা। ফলে যথেষ্ট আয় করেও অনেক সময় তাদের উপযুক্ত খাদ্য-বস্ত্রসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের কষ্টে দিনাতিপাত করতে হয়। রাজবাড়িসহ দেশের আর্থ-সামাজিকক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ, স্বাস্থ্য ও আইন-শৃঙ্খলার জন্য হুমকিসত্ত্বেও স্বাধীনতার চারদশক পরেও এ সমস্ত হতভাগ্য নারী-শিশুদের উদ্ধারের জন্য কার্যকরী কোন পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হয়নি, যা জাতি হিসেবে আমাদের জন্য চরম অবমানকর।

সুতরাং ২০১১ সালের শুরুতে আশা করি সরকারী-বেসরকারী সংস্থাসমূহ এদের পুনর্বাসনে এগিয়ে আসবে। ইসলামী দলগুলোরও ভূমিকা এ ব্যাপারে নেই বললেই চলে, যা হতাশাব্যঞ্জক। বিদেশী অর্থায়নে কিছু কিছু এনজিও এদের নিয়ে কাজ করে ঠিকই কিন্তু তা এদের স্থায়ী পুনর্বাসনের জন্য নয়। বরং অন্যান্য বৈধ শ্রমজীবীদের কাতারে ফেলেই ‘যৌনকর্মী  হিসেবে এদের জীবন- মানোন্নয়নের লক্ষ্যেই তারা যা কিছু করার করে থাকে। কিন্তু ইসলাম যেহেতু মানুষকে শ্রেষ্ঠজীব হিসেবে দেখে এবং পরকালে পাপ-পুণ্যের হিসেবের কথা বলে, সেক্ষেত্রে ইসলামী দলগুলো এদের দায়-দায়িত্ব কোনক্রমেই এড়িয়ে যেতে পারে না। তাদের এধরণের নিশ্চুপ ভুমিকার ব্যাপারে যে প্রশ্নও ওঠেনা, তা কিন্তু নয়? তাই স্থায়ী পুনর্বাসনের  ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত এদের মৌলিক মানবাধিকার পূরণের লক্ষ্যে বেশকিছু পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে।
ক. দৌলতদিয়া যৌনপল্লী নিয়ে কর্মরত বেসরকারী সংস্থার সহায়তায় সরকার কর্তৃক ঐ নোংরা পল্লীর নিষ্পাপ শিশুদের অবিলম্বে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। 
খ. যৌনপল্লীতে বাড়ন্ত কিশোরী এবং পাচার হয়ে আসা কিশোরীদের উদ্ধারের জন্য জেলাপ্রশাসনের মাধ্যমে সরকারী-বেসরকারী সংস্থার সমন্বয়ে কমিটি গঠন করতে হবে। অতপর কমিটির নেতৃত্বে ও তত্ত্বাবধানে পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতায় অনির্ধারিত ঝটিকা অভিযান চালিয়ে কিশোরীদের উদ্ধারের ব্যবস্থা করতে হবে।
গ. দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে দালাল ও বাড়িওয়ালীদের মাধ্যমে পাচারকৃত কিশোরী এবং নারীরা যাতে পুনরায় যৌনপেশায় যুক্ত হতে না পারে, সংশ্লিষ্ট এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় তা নিশ্চিত  করতে হবে।
ঘ. অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোরীদের কথিত এফিডেভিট করার ক্ষেত্রে নোটারি পাবলিক বা সংশ্লিষ্ট ম্যাজিষ্ট্রেটদের সহযোগিতাবন্ধে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে।
ঙ. পুলিশি অভিযানে ধৃত কিশোরীরা নিরাপত্তা হেফাজত থেকে আবার যাতে আদালত হয়ে দেহব্যবসায়ীদের খপ্পরে না পড়ে তা নিশ্চিত করতে হবে।
চ. যৌনপল্লীর নারী-শিশুদের পুনর্বাসনে বাধ্যতামূলক এবং কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি  ভাসমান পতিতাবৃত্তিসহ সকল পতিতাবৃত্তি বন্ধ করতে হবে।
ছ. পুরুষ বিশেষত ছাত্র ও অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেদের বহুগামিতাবন্ধে সকল সামাজিক প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
জ. পুনর্বাসিত না হওয়া পর্যন্ত যৌনপল্লীর নারীদের ওপর সকলপ্রকার নির্যাতনবন্ধে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে।
ঝ. রাজবাড়ি থেকে প্রকাশিত RCN এবং সরকারী-সেরকারী  ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্টমিডিয়ার মাধ্যমে পতিতাবৃত্তির ভয়ঙ্কর দিকগুলো প্রচারের দ্বারা সামাজিক গণ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
ঞ. সমাজকল্যাণমন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সরকারী-বেসরকারী এনজিও/প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যৌনপল্লীর নারীদের স্থায়ী পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। এক্ষেত্রে এনজিও/প্রতিষ্ঠানের এগিয়ে আসার কাজে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় উৎসাহ যোগাতে হবে।   



নারী ও মেয়েশিশুর নির্যাতনকারীদের ক্ষমা নেই
-শাহ আলম বাদশা

সুন্দরী অবুঝ শিশু সামিনা, বয়স ৮/৯ বছর। আর সুন্দরী হওয়াটাই হয়েছে ওর কাল। তালাকপ্রাপ্ত মায়ের সাথেই থাকে বস্তিতে। মা অন্যের বাড়িতে সারাদিন কাজশেষে সন্ধ্যায় ফেরেন আর সে ওর মা না আসা পর্যন্ত ঘরে ও বস্তিতে খেলেই দিন কাটায়। দুঃখের কপাল তাই দুপুরের রান্নাটাও তাকেই সেরে ফেলতে হয়। ৬ বছর বয়স পর্যন্ত সে বকুলফুলের মালা বেচতো। এখন ওকে তা করতে দেয়না ওর মা। এরই মধ্যে ঘটে যায় ওর ছোট্রজীবনের চরম সর্বনাশ। একদিন দুপুরবেলা বস্তির বখাটে সুজন সদলবলে ঘরে ঢুকে সামিনাকে ধর্ষন করে পালিয়ে যায়। পর সন্ধ্যায় মা এসে রক্তাক্ত ও অজ্ঞান অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে গেলে শেষপর্যন্ত বেঁচে যায় সে।  কিন্তু ইচ্ছে থাকলেও ওর মা আইনের আশ্রয় নিতে পারেনি সন্ত্রাসীদের রক্তচক্ষুর ভয়ে। উল্টো নিজের জীবন বাঁচাতে মেয়েসহ তাকেই বস্তিত্যাগ করে চলে যেতে হয়।

এ ধরনের আরও কত সামিনা, তানিয়া, টুনিদের ভাগ্যে প্রতিনিয়ত ঘটছে পাশবিক নির্যাতন । কিন্তু এদের ক্ষেত্রে বিচারের  বাণী কেবল নির্ভৃতেই কাঁদে, হয়না সন্ত্রাসী-ধর্ষকদের বিচার। কিছু কিছু পত্রিকায় এসব কাহিনীর প্রচার হলেও অধিকাংশই ঘটনাই থেকে যায় আড়ালে। মূলতঃ শিশু ও নারীধর্ষণ আর নির্যাতন আজ সামাজিক এক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। একারণেই ‘‘ কর্মজীবী নারী’’ নামক একটি বেসরকারি সংস্থা ২০০৬ সালে সংঘটিত নারীনির্যাতনের ওপর একটা জরিপ চালায়। এদেশের ১০টি জাতীয় দৈনিকে গতবছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেমবর পর্যন্ত প্রকাশিত সহিংসতার ঘটনার ওপর ভিত্তি করে তারা যে তথ্যচিত্রটি প্রকাশ করেছে, তা এককথায় ভয়াবহ। সংখ্যাচিত্রে দেখা যায় যে,  গতবছর ২,৭২৯ জন নারী  ও শিশু নানারকম সহিংসতার শিকার হয়েছে। ধর্ষণ, এসিডনিক্ষেপ, যৌতুক, পাচার, অপহরণ, আত্মহত্যা, শারীরিক নির্যাতন, যৌনহয়রানী ও অগ্নিদগ্ধের ঘটনা ঘটেছে যথাক্রমে ৬০৬, ১৪৭, ৮৮, ১৫৫, ৩৫৭, ৮৬৪, ২১০, ৪৩ ও ২০টি। এছাড়াও ১৮টি অপহরণচেষ্টা, ৪৭টি হত্যা প্রচেষ্টা, ৬০টি রহস্যজনক মৃত্যু, ২৩টি আত্মহত্যার চেষ্টা, ২৫টি ফতোয়া এবং ৬টি উত্যক্তকরণের ঘটনাও ঘটেছে। এতসব ঘটনার ক্ষেত্রে মামলা হয়েছে মাত্র ১,১৫২টি আর মামলা হয়নি ৭৫৬ টির । ৮২১টি ঘটনার ক্ষেত্রে মামলা হওয়া না হওয়ার কোন তথ্য উদঘাটিত হয়নি। পত্রিকায় প্রকাশিত হয়না এমন ঘটনার সংখ্যাও কিন্তু কম নয়।

গরীব-ধনী নির্বিশেষে বিভিন্ন আঙ্গিকেই নারী ও শিশুনির্যাতন ঘটে থাকে এদেশে। যেমন গৃহকর্তা বা সংশি­ষ্ট অন্য কারোদ্বারা কাজের মেয়ে ধর্ষণ, হত্যা, শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন, আত্মহত্যায় প্ররোচনাদান, বিয়ের প্রলোভন দিয়ে গর্ভবর্তীকরণ ও পিতৃ পরিচয়দানে অস্বীকৃতিজ্ঞাপন, জোরপূর্বক গর্ভনষ্ট বা মাতৃত্ব নষ্টকরণ, প্রেমের ফাঁদে ফেলে সতীত্বহরণ, কিংবা পতিতালয়ে বিক্রিকরণ বা পাচার, আর শিক্ষিত নারীদের কলগার্ল হিসেবে নিযুক্তকরণ, পরকিয়া সম্পর্কের কারণে স্ত্রীকে তালাকদান ইত্যাদি আজ নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এভাবে শিক্ষিত-অশিক্ষিত অনেক পরিবারে নারীর মানসিক ও অর্থনৈতিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এভাবে শিক্ষিত-অশিক্ষিত অনেক পরিবারে নারীর মানসিক ও অর্থনৈতিকসহ হরেকরকম কদর্য নির্যাতনের ঘটনা পর্দার আড়ালেই থেকে যাচ্ছে। আসলে বর্তমান সমাজে নারীরা সাধারনত জন্মের পরই বিশেষত সামাজিক ও পারিবারিক বৈষম্যের শিকার হয়ে থাকে। উচ্চশিক্ষিত পরিবারেও বহু ভয়াবহ নারীনির্যাতন ঘটে থাকে, যা কদাচিৎ মিডিয়ায় প্রচারিত হয়ে থাকে। রীমা হত্যা, বুশরা হত্যার মতো অসংখ্য ঘটনার কথাতো এখনো কারো ভুলে যাবার কথা নয়। নারীরা আজ পুরুষ কর্তৃক যেমন নির্যাতিত হচ্ছে তেমনি নারী কর্তৃকও নির্যাতিত হচ্ছে ব্যাপকভাবে । শাশুড়ী, ননদ, জা কর্তৃক নারীনির্যাতনের পাশাপাশি পুত্রবধুর হাতে শ্বশুর-শাশুড়ী বা দেবর-ননদের নির্যাতনের কাহিনীও কিন্তু কমনেই এদেশে। অন্যদিকে গৃহকত্রী কর্তৃক কাজের মেয়ে নির্যাতন, হত্যা, সংঘবদ্ধ নারীচক্র কর্তৃক শিশু ও নারীপাচার, ধর্ষণসহ অভিজাত দেহব্যবসায়ের কাজে নারীর পরোক্ষ-প্রত্যক্ষ সহায়তাদানের নজিরও কম নয়। মহামাী আকারে ছড়িয়ে পড়া এ অমানবিক ব্যাধি নির্মূলে যথাযথ আইনের শাসন ছাড়াও সামাজিক গণসচেতনতা সৃষ্টির কোন বিকল্প নেই।  তেমনি ইসলামধর্মে নারীর উচ্চমর্যাদাদানের বিষয়টিও আজ সামনে আনতে হবে। কেননা ইসলামে বলা হয়েছে, কোন স্বামীর তার স্ত্রীকে ঘৃণা করা উচিত নয়। তার একটা অভ্যাস যদি স্বামীর ভালো না লাগে, তবে আরেকটা অভ্যাস ভালো লাগবে (মুসলিম শরিফ) । আরেক হাদিসে বলা হয়েছে, আমার স্ত্রীদের কাছে অনেক মহিলা তাদের স্বামীদের মারপিটের অভিযোগ নিয়ে আসছে। মারপিটকারী স্বামীরা উত্তম মানুষ নয় (আবু দাউদ)। নারীনির্যাতনরোধে ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রচার এবং প্রসারও ঘটাতে হবে ব্যাপকভাবে। ধর্মীয়চেনার সমন্বয়ে সামাজিক গণজাগরণ সৃষ্টি তাই আজ সময়ের দাবি। এরই ধারাবাহিকতায় এবার ৮ মার্চে পালিত হবে ‘‘ আন্তর্জাতিক নারী দিবস’’ যার শে­াগান হচ্ছে  ‘‘ নারী ও মেয়েশিশুর নির্যাতনকারীদের ক্ষমা নেই’’ । সুতরাং এখন সময় এসেছে নারী ও শিশুনির্যাতনকারী পশুদের পারিবারিক ও সামাজিকভাবে বয়কটের এবং কঠোর শাস্তিবিধানের।

যৌতুক নামের কৌতুক
শাহ আলম বাদশা
  
পবিত্র ইসলামধর্মে বিবাহ একটি সামাজিক চুক্তি হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত। তাই একজন স্ত্রী বা পাত্রীকে কখনও ভোগের সামগ্রী বা যৌনদাসী হিসেবে দেখেনি ইসলাম বরং তাকে দিয়েছে জীবনসঙ্গিনীর নজিরবিহীন মর্যাদা। কোরআনে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে, ‘নারীরা পুরুষের পোশাকস্বরূপ আর পুরুষরাও নারীদের পরিচ্ছদস্বরূপ!’ এজন্যই কোনো নারীকে জীবনসঙ্গিনী করার ক্ষেত্রে পুরুষের জন্য সর্বপ্রথম শর্ত হচ্ছে, সকল আনুষ্ঠানিকতার পূর্বেই অফেরতযোগ্য বাধ্যতামূলক জামানত হিসেবে স্ত্রীকে সুনির্দিষ্ট মোহরানা (আংশিক হলেও) প্রদান করতে হবে। অন্যথায় বিবাহ কোনোক্রমেই সিদ্ধ ও শুদ্ধ হবে না। এক্ষেত্রে পাত্রীর পক্ষে পুরুষকে উল্টো যৌতুক দেয়ার প্রশ্নতো একেবারেই অবান্তর! বিয়েতে পাত্র-পাত্রীর গুণ হিসেবে শুধুমাত্র অর্থ-সম্পদকেও অগ্রাধিকার দিতে বলেনি ইসলাম। বরং দাম্পত্যসুখের পূর্বশর্ত হিসেবে নারী-পুরুষের সচ্চরিত্র ও খোদাভীতিকেই অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। হাদিসে বলা হয়েছে যে, ’’তোমাদের (নারীদের) নিকট যখন কোনো পুরুষ বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়, যার চরিত্র ও খোদাভীতির ব্যাপারে তোমরা সন্তুষ্ট, তবেই তোমরা কোনো নারীকে তার কাছে বিয়ে দাও। অন্যথায় পৃথিবীতে গন্ডগোল ও বিপর্যয় দেখা দেবে (তিরমিযি)।‘‘ অর্থাৎ চরিত্রহীন পুরুষকে বিবাহ করা কিংবা বিবাহের ক্ষেত্রে যৌতুক বা ধন-সম্পদকেই প্রাধান্য দেয়ার ফল কখনো শুভ হতে পারেনা। এক্ষত্রে রীমাহত্যা ও খুকু-মনিরের কাহিনীই এর জ্বলন্তপ্রমাণ। অথচ আমাদের সমাজে বিয়ের নামে যা হচ্ছে, তা অধিকাংশক্ষেত্রেই নাটকীয়তা, স্ববিরোধিতা ও ধর্মহীনতায় ভরপুর।

প্রসঙ্গত দেশের শীর্ষস্থানীয় পত্রিকাগুলোর পৃষ্ঠপোষকতায় অবাধে ‘পাত্র-পাত্রী চাই’ শিরোনামে বিবাহপ্রতিষ্ঠানগুলো যৌতুকলেনদেনের যে প্রকাশ্য ব্যবসায় চালাচেছ, সেদিকে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। অথচ ইসলামধর্ম একজন বিবাহযোগ্যা নারীকে এতদূর পর্যন্ত মর্যাদাবতী করেছে যে, বিবাহের সময় পাত্রীকে নয় বরং পাত্রপক্ষকেই যেতে হয় পাত্রীর বাসায় এবং বাধ্যতামূলকভাবে মোহরানা পরিশোধসাপেক্ষে আবার পাত্রীকে সসম্মানে তুলে নিয়ে আসতে হয় নিজের ঘরে। তাছাড়া যেখানে আংশিক বা সম্পূর্ণ মোহরানা পরিশোধছাড়া একজন স্বামী তার নববধুকে স্পর্শ করার কোনো অধিকারই অর্জন করেনা, সেক্ষেত্রে আমরা সমাজে দেখি তার সম্পূর্ণ উল্টোটাই! তবে মোহরানানির্ধারণের ক্ষেত্রেও বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করা হয়েছে, যদিও মোহরানার অপরিশোধিত অংশ বিয়ের পর পরিশোধের সুযোগ ব্যতীত পুরুষকে আর কোনো ছাড়ই দেয়নি ইসলাম। নবী সাঃ বলেন, ‘মোহরানার শর্তটি পূরণ করা সর্বাধিক অগ্রগণ্য যার কারণে তোমরা নারীর সতীত্বের অধিকার লাভ করেছো (বোখারি ও মুসলিম)।’ আরেক হাদিসে বলা হয়েছে, ‘সর্বোত্তম মোহরানা হচ্ছে সেটি, যা সর্বাধিক সহজ হয় (নাইলুল আওতার)।’

সুতরাং এটা পরিস্কার যে, মোহরানা হচ্ছে পুরুষের পক্ষ থেকে বিবাহেচ্ছুক নারীকে প্রদত্ত এককালীন অফেরতযোগ্য জামানত, যা থেকে পুরুষের মুক্তি পাবার কোনোই সুযোগ নেই। অন্যদিকে, বিয়েতে যৌতুকদেয়া-নেয়া যেমন হারাম ও দন্ডনীয় অপরাধ। আমাদের দেশের বিবাহের ক্ষেত্রে মারাত্মক একটি ভুলধারণাও প্রচলিত আছে যে, নারীর মোহরানার অধিকারটি যেনো কেবলমাত্র বিবাহবিচ্ছেদের সঙ্গেই সম্পৃক্ত আর যৌতুক বস্ত্তটি যেনো বরের পক্ষে তাৎক্ষণিক আদায়যোগ্য এক ন্যায্য অধিকার।  আমাদের সমাজে বিরাজমান মারাত্মক যৌতুকব্যাধি ও বিবাহে নারীর মোহরানানির্ধারণের বর্তমান স্বরূপটিও কিন্তু বেশ লক্ষ্যণীয়। এমনকি এদেশের দুরাবস্থা বর্তমানে এমন পর্যায়ে পৌঁচেছে যে, পবিত্র বিবাহের ক্ষেত্রে জীবনসঙ্গিনী বা অর্ধাঙ্গিনী বলতে সাধারণত যা বুঝায়, আজকাল বর বা বরপক্ষ সেই অর্থে একজন নারীর জন্য উতলা না হয়ে বরং যৌতুকের জন্যই পাগলপারা হয়ে থাকে। অপরদিকে, কন্যাপক্ষও আভিজাত্যরক্ষা কিংবা মেয়ের ভবিষ্যৎ বিবাহবিচ্ছেদের আশংকায় বিবাহবৈঠকেই অস্বাভাবিক মোহরানানির্ধারণের চেষ্টা করে থাকে। সত্য বলতে কী, আমাদের সর্বাত্মক নৈতিক ও সামাজিক অবক্ষয়ের কারণেই আজ বিয়ের মত পবিত্র ধর্মীয় বন্ধনের ক্ষেত্রেও ব্যবসায়িক মনোবৃত্তিসহ চরম ধর্মহীনতার কালোথাবা বিস্তৃত হয়েছে। অর্থাৎ আজকাল পাত্রীর জন্য এত মর্যাদাপূর্ণ অধিকারস্বরূপ ফরজ মোহরানার ব্যাপারটা বিবাহের ক্ষেত্রে যৌতুকের মতোও গুরুত্ব পাচ্ছনা বরং লোকাচার হিসেবে কবিননামায় কাগুজে বাঘ হয়েই লিপিবদ্ধ থাকছে মাত্র। সেক্ষেত্রে যৌতুক নামের কৌতুকস্বরূপ দন্ডনীয় হারাম লেনদেনটি সেখানে শুধু মূখ্য হয়ে দাঁড়াচেছ না, বিবাহের মূল চালিকাশক্তিতেই পরিণত হয়েছে বললে অত্যুক্তি হবে বলে মনে হয়না। যে মোহরানা ধর্মত: ও আইনত: একজন নারীর জন্য আত্মরক্ষার রক্ষাকবচস্বরূপ, সেস্থানই আজ দখল করে বসে আছে সর্ববিধানে নিষিদ্ধ ও ঘৃণিত সেই যৌতুক নামের সেই কৌতুক, কী দূভার্গ্য আমাদের? শুধু শহরকেন্দ্রিক শিক্ষিত সমাজই নয়, গ্রামীন ও অল্প-অর্ধশিক্ষিত সমাজেও যৌতুকের মহামারী অবাধেই চলছে। শুধু কি তাই, যৌতুকের কারণে শিক্ষিত-অশিক্ষিতনির্বিশেষে কত সংসার যে ভাঙছে, তার  ইয়ত্তা নেই? এমনকি যৌতুকের কাত্মণে প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য নারীনির্যাতন শুধু নয়, অহরহ খুনও হচ্ছে কতশত নারী, যার নগণ্য অংশমাত্রই আমরা জানতে পারছি পত্রিকার পাতায়!
 
 তবে এটাও অত্যন্ত লজ্জাজনক যে, আমাদের অভিভাবক ও পাত্র-পাত্রীদের মোহরানাসংক্রান্ত চরম অজ্ঞতার কারনেই আজ পুরুষের পক্ষে বাধ্যতামূলক পরিশোধযোগ্য মোহরানার স্থানটি দখল করে আছে যৌতুক নামের সর্বনাশা সংক্রামক ব্যাধিটি। সুতরাং নারীজাতি বিশেষত: বিবাহের পাত্রীরা যদি বিবাহের ক্ষেত্রে মোহরানানির্ধারণ ও তা আদায়ের বাধ্যবাধকতা সম্পর্কে সত্যিকার অর্থেই সচেতন হয়, তাহলে যৌতুকপ্রথাটি লেজগুঁটিয়ে পালাতে বাধ্য হবে। পাত্রী যদি বিবাহ অনুষ্ঠানে মোহরানানির্ধারণ ও আদায়ের ক্ষেত্রে সংক্রিয়-সচেতনভাবে উদ্যোগী ভূমিকা রাখে অর্থাৎ বিশেষ করে যৌতুকলোলুপ পাত্রকে মোহরানার ব্যাপারে কোনোরূপ ছাড়ই্ না দেয়, তাহলে পাত্রপক্ষকে যৌতুকের দাবি ছেড়ে দিয়ে পাত্রীর মোহরানার টাকা জোগাড় ও পরিশোধের  ধান্ধাতেই গলদঘর্ম হতে হবে। এজন্য সর্বপ্রথম পাত্রীর অভিভাবকদের পাত্রীর প্রাপ্য অধিকার হিসেবে মোহরানানির্ধারণ এবং তা পরিশোধসংক্রান্ত সমঝোতায় পাত্রীর অংশগ্রহণকে নিশ্চিত করতে ও তার মতামতকেই অগ্রাধিকার দিতে শিখতে হবে। এতে ফলাফল অন্তত: এতটুকু দাঁড়াবে যে, পাত্রপক্ষ যৌতুকের পক্ষে আর শক্তভাবে দাঁড়াতে পারবেনা এবং মোহরানার টাকা পুরোপুরি শোধ করতে না পারলেও আংশিক পরিশোধসাপেক্ষে পাত্রীর কাছে তাদের ঋণগ্রস্ত হয়েই থাকতে হবে। এমনকি সংসার চলাকালীনও যদি পাত্র বা পাত্রপক্ষ কখনো যৌতুক চায় ও নির্যাতন করে, তবে নীরবে নির্যাতন সহ্য না করে পাত্রীকে তাৎক্ষণিকভাবে আদালতে মামলাদায়েরপূর্বক মোহরানা আদায়ের ব্যবস্থা করা উচিৎ। এরফলেও পাত্রী এতটুকু সুবিধে পেতে পারে যে, মোহরানার টাকা পরিশোধের চাপে পড়ে হলেও পাত্রপক্ষ তার সাথে সমঝোতায় আসতে বাধ্য হতে পারে।
এক্ষেত্রে ইমাম বা বিবাহরজিস্টার কাজিরাও বিভিন্ন সামাজিক অষ্টুষ্ঠান যেমন মসজিদে, নামাজের জামায়াতে, বিবাহের খুৎবায় এবং বিবাহরেজিষ্ট্রির সময় মোহরানার সপক্ষে ও যৌতুকের বিপক্ষে জনমত গড়ে তুলতে জোরালো ভূমিকাপালন করতে পারেন। বিয়েতে যৌতুকের লেনদেন থাকলে বা বাধ্যতামূলক মোহরানার টাকা পাত্র আদৌ পরিশোধ না করতে চাইলে তারা সে বিবাহপড়ানো এবং বিয়ে রেজিস্ট্রিও বর্জন করতে পারেন। এমনকি প্রয়োজনে বিষয়টি যেকোনভাবে তারা পুলিশের গোচরেও আনতে পারেন।   



ইভটিজিং এর কারখানা হলো সিনেমা-নাটক আর ক্যাবল টিভি  ইত্যাদি মাধ্যমগুলো?? 
 আমার কথা শুনে হয়তো অনেকেই বলে বসবেন যে, লোকটা সেকেলে-অনাধুনিক ইত্যাদি । নাহ, আমি অত্যন্ত আধুনিকসত্বেও অভিজ্ঞতার আলোকেই বলছি। আপনাদের বিবেক কী বলে এবার আপনারাই বলুন?

  প্রথমত; আদালত ইভটিজিংকেও যৌনহয়রানী বলে রায় দিয়েছে, যা একদম সঠিক। আর এ ধরণের হয়রানীর গুরু হল আমাদের বস্তাপঁচা অধিকাংশ সিনেমা-নাটক ইত্যাদি। কারণ সিনেমা-নাটকেই দেখানো হয় যে, বখাটেরা বা প্রেমপিয়াসীরা টার্গেটকৃ্ত মেয়েদের পেছনে লেগেই থাকে এবং নানাভাবে উত্যক্ত করে যাকে আইনীভাষায় বর্তমানে ইভতিজিং বলে!  

  নারী বা মেয়েদের স্কুল-কলেজ, কর্মস্থল বা রাস্তা-ঘাটে আজ যে নানাভাবে উত্যক্ত করা হয় যেমন পথ আগলে ধরা, গায়ে হাত দেয়া, ওড়না টেনে ধরা, ধর্ষন করা, জোরপুর্বক বিয়ে করা, বিয়ের আসর থেকে তুলে নেয়া, বিয়ে বা প্রেম/অসম প্রেমের প্রস্তাবে রাজী না হলে মেয়ের বাপ-মা'র সাথেও খারাপ ব্যবহার এমনকি হত্যা করার দৃশ্যাবলী এমনকি মেয়েদের অসামাজিক-উদোম পোশাক পড়ানো বা গিলানোও শিখিয়েছে এইসব মাধ্যম! এইসব মাধ্যম যখন একেবারেই ছিলোনা বা কম ছিলো বা শালীনতার ভেতরেই সীমাবদ্ধ ছিল, তখনকার অবস্থার সঙ্গে বর্তমানউবস্থার তুলনা করলেই ব্যাপারটা অস্বীকার করার জো থাকেবেনা।

  অন্যভাবে বলা যায়, এসবের যত উন্নতি ঘটেছে নৈতিক অধপতন আমাদের ততই বেড়েছে মানে সীমাহীনপর্যায়ে এসে ঠেকেছে।




  শুধু তা-ই নয়, সিনেমা-নাটক ও দিশ লাইনের বদৌলতে আজ যৌনহয়রানী বা ইভটিজিং এর প্ররোচনাই দেয়া হয় না এমনকি আইন না মানা যেমন ধুমপানের দৃশ্য, বেপরোয়া গাড়িচালানো,  ট্রাফিককে না মানা, আইন হাতে তুলে নেয়া, বিয়ের ক্ষেত্রে বাপ-মায়ের সম্মতিকে অবজ্ঞা দেখিয়ে  প্রেমকেই পবিত্রতার দোহাই দিয়ে বড় করে দেখানোসহ হাজারো বেআইনী বিষয়কে উৎসাহিত করা হয়, যা আমাদের সন্তানদের মনে রেখাপাত করে কী ছেলে কী মেয়ের ভেদাভেদ নেই এখানে!!

  আমাদের সমাজ-ব্যবস্থা, ধর্ম- রীতি-নীতিকে যদি এসব মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা যেতো, তাহলে আমাদের অবস্থা এতো খারাপ হতো না, এটা আমার অভিজ্ঞতার কথা বললাম। এখন আপনারাও বলুন, আমাদের নতুন প্রজন্মকে বাঁচাতে আমাদের করণীয় কী কী হতে পারে।।               

অপরাধ দমনে সরকারের অঙ্গীকার ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার
শাহ আলম বাদশা

            ৭৩ বছরের বৃদ্ধা রহিমনের মনে সুখের বাতাস। তাঁর কলেজ পড়ুয়া নাতি শহর থেকে এসে তাঁকে বলে গেল, রাজাকারদের বিচার হবে। ’৭১ সালে দেশে টান টান যুদ্ধাবস্থা। একদিকে পাক-হানাদার অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধা। এরই মধ্যে চামচিকা রাজাকার। একদিন রাজাকাররা এসে ধরে নিয়ে গেল তার স্বামীকে। অপরাধ ছেলে বাড়ীতে থাকে না, অর্থাৎ মুক্তিযোদ্ধা। চোখের সামনে মেরে ফেলল তাঁর স্বামী জমিরউদ্দিনকে। যুদ্ধে মারা গেছে তাঁর মুক্তিযোদ্ধা ছেলে। সে একেবারে খুদে ৭ বছর বয়সী মুক্তিকে বুকে আগলিয়ে বড় করেছে। কিন্তু রাজাকারদের বীভৎস নৃশংস হত্যাকান্ড ভুলতে পারেনি। সেই রাজাকারদের বিচার হয়নি। বরং সেই রাজাকাররা স্বাধীনতার পর দেশের ক্ষমতাবান বিত্তবান হয়েছে। দুঃখে ক্ষোভে লজ্জায়, মরে যেত রহিমন। প্রতিদিন আল­াহুর কাছে দোয়া করত, সেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য। রহিমন ডুকরে ডুকরে কাঁদে। বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে, এ অধ্যায়ের অবসান বুঝি হবে, এবার। আল­াহ তাঁর দোয়া কবুল করেছে। রাজাকারদের বিচার হবে। তাঁর স্বামীর হত্যাকারীদের বিচার হবে।            

বর্তমান সরকারের অন্যতম নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল অপরাধদমন এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। তাই দেশের অপরাধদমন ও অপরাধীদের কার্যকরভাবে মোকাবেলার উদ্দেশ্যে ইতোমধ্যে বেশকিছু নতুন আইন প্রণীত হয়েছে। যেমন- জনগণকে ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে চাঁদবাজী, যানবাহনের ক্ষতিসাধন অথবা গতিরোধ, সরকার বা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি বিনষ্ট, ছিনতাই, জনজীবনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, টেন্ডারবাজী, অর্থআদায় ইত্যাদি দমনে ‘‘আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইন’’। সারাদেশে ৭৬টি আদালতের মাধ্যমে কার্যকরভাবে সংশি­ষ্ট অপরাধের বিচার করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ২ বছর এবং সর্বোচ্চ ৫ বছর কারাদন্ড ও অর্থদন্ড দেয়া হয়ে থাকে।

হত্যা, ধর্ষণ, আগ্নেয়াস্ত্র, বিস্ফোরকদ্রব্য এবং মাদকদ্রব্যসংক্রামত্ম অপরাধদমনে প্রণীত হয়েছে- ‘‘দ্রুত বিচার ট্রাইবুনাল আইন’’। সারাদেশে ৯টি ট্রাইবুন্যালের মাধ্যমে বিচার কার্য চলছে। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ শাসিত্ম হচ্ছে মৃত্যদন্ড। তাছাড়া ‘‘এসিড অপরাধদমন আইন-’’ প্রণয়নের মাধ্যমে এসিডের অপব্যবহারকারীদের পূর্বের তুলনায় অধিকতর কার্যকরভাবে মোকাবেলা করা সম্ভব হচ্ছে। এমনকি ৩টি নতুন আইন প্রণয়ন এবং বিদ্যমান ৫টি আইন সংশোধনের ফলে অপরাধদমন এবং অপরাধীদের শাসিত্মবিধানে অনুকুল অবকাঠামো প্রস্ত্তত হয়েছে।

প্রচলিত বিচারব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রিতা পরিহার, বিচারের সহজলভ্যতা নিশ্চিতকরণ, পদ্ধতিগত জটিলতা সহজীকরণ এবং বিচারপ্রক্রিয়া ব্যয়হ্রাসের মাধ্যমে সামগ্রিক বিচারব্যবস্থার দক্ষতাবৃদ্ধির লক্ষ্যে দেশের দেওয়ানী কার্যবিধি সংশোধন, ফৌজদারী আইন সংশোধন ও অর্থঋণ আদালত আইন নতুনভাবে প্রণীত হয়েছে। অবৈধ পন্থায় অর্থহসত্মামত্মর, রূপামত্মর, অবস্থান, গোপনকরা, পাচারপ্রতিরোধ ও শাসিত্মবিধানের লক্ষ্যে ‘‘মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন’’ প্রণয়ন করা হয়েছে।

আইন প্রণয়নের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ ও চাঞ্চল্যকর মামলাসমূহ নিবিড়ভাবে পর্যালোচনা ও পারবীক্ষণের লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে জাতীয় পর্যায়ে ১০ সদস্যবিশিষ্ট মনিটরিং সেলে তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করা হয়ে থাকে। এমনকি মামলা আদালতে উপস্থাপনের পূর্বে তদমত্ম রির্পোটসমূহের টেকনিক্যাল ত্রুটি-বিচ্যুতি পর্যালোচনা করা হয়।  অনুরূপভাবে দেশের ৬৪টি জেলায় জেলাপ্রশাসকের নেতৃত্বে এবং ৬ বিভাগে বিভাগীয় কমিশনারদের নেতৃত্বে মনিটরিং সেলেও নিবিড় পর্যালোচনা হচ্ছে। এতে মামলা নিষ্পতিতে বিলম্ব দূর হচ্ছে এবং বেশির ভাগ মামলা শাসিত্মর মাধ্যমে নিষ্পত্তি হওয়ায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে। নিষ্পত্তিকৃত মামলাগুলোর মধ্যে উলে­খযোগ্য হচ্ছে -গাইবান্ধার তৃষা হত্যা মামলা, ঢাকায় শিহাব, জুয়েল, শিশু নওশীন, শাজনীন হত্যা মামলা।

                         
এসিডসংক্রামত্ম ২টি আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে যেমন‘‘জাতীয় এসিড নিয়ন্ত্রণ কাউন্সিল’’ রয়েছে তেমনি জেলায় জেলায় ‘‘জেলা এসিড নিয়ন্ত্রণ কমিটি’’ কার্যকর রয়েছে। এছাড়াও ‘‘এসিড নিয়ন্ত্রণ (তহবিল) বিধিমালা’’ প্রণয়ন করা হয়েছে এবং এসিডের ব্যবহার, উৎপাদন ইত্যাদি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নের জন্য ‘‘এসিড আমদানী, উৎপাদন, মওজুদ, পরিবহন, বিক্রয় ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা’’ প্রণয়ন করা হয়েছে।

বিশেষতঃ নারী ও শিশু পাচাররোধে বিচারাধীন মামলায় অগ্রগতি এবং এ সংক্রামত্ম বিভিন্ন কার্যক্রম মনিটরের উদ্দেশ্যে স্বারাষ্ট্রসচিবের নেতৃত্বে আমত্মঃমন্ত্রণালয় কমিটি কার্যকর রয়েছে। নারী ও শিশু পাচারসংক্রামত্ম ২০টি সুনিদিষ্ট মামলা নিবিড়ভাবে মনিটর করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের যুগ্নসচিব (আনসার, উন্নয়ন ও সীমামত্ম) এর নেতৃত্বে আমত্মঃমন্ত্রণালয় কমিটি কাজ করছে। পুলিশ সদরদপ্তরে নারী ও শিশু পাচাররোধে একটি সেল গঠিত হয়েছে। উক্ত সেল নারী ও শিশু পাচারসংক্রামত্ম মামলা এবং ভিকটিম উদ্ধার ও পূর্ণবাসন সংক্রামত্ম বিষয়াদি নিয়মিত মনিটর করছে। নারী ও শিশু পাচারসম্পর্কিত মামলাসমুহ আরো গুরুত্বসহকারে পরিচালনার জন্য জাতীয় পর্যায়ে একজন সহকারী এর্টনি জেনারেল এবং প্রতি জেলায় একজন করে পিপিকে সুনিদির্ষ্ট দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে প্রতিজেলায় মানবপাচার বিশেষতঃ নারী ও শিশু পাচাররোধকল্পে একটি কমিটি গঠিত হয়েছে। ভূয়া জাল পাসপোর্ট ও ভিসা ব্যবহার এবং মানবপাচার রোধকল্পে সুপারিশ প্রণয়নের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্নসচিবকে(আনসার, উন্নয়ন ও সীমামত্ম) আহবায়ক করে একটি আমত্মঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করা হয়েছে।

অপরাধদমন এবং আইন-শৃঙ্খলার উন্নয়নে পুলিশের ভূমিকা অনস্বীকার্য। কিন্তু বাংলাদেশে প্রতি ১৩৫০ জন লোকের জন্য রয়েছে মাত্র ১ জন পুলিশ সদস্য, যেখানে ভারতে প্রতি ৭২৮ জনের ১ জন ও পাকিসত্মানে প্রতি ৬২৫ জনে ১ জন পুলিশ রয়েছে। সরকার তাই পুলিশের জনবলবৃদ্ধির বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ে ১৩০৭৭টি নতুন পদসৃজন করা হয়েছে। তাছাড়া কারাগারের অপরাধীদের সংশোধনের পাশাপাশি ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। সারাদেশে বন্দী ধারণক্ষমতা ২৪,৫১২ জন থেকে ২৫,৭১২ জনে উন্নীত করা হয়েছে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে শিশুদের জন্য ডে-কেয়ার সেন্টার চালুও একটি ব্যাতিক্রমী পদক্ষেপ। দেশের ৪টি মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্টেসিতে ৩৯ জন বিচারকের মাধ্যমে ফৌজদারী মামলা নিষ্পত্তির ব্যবস্থাও চালু রয়েছে। দূর্নীতিদমনের ক্ষেত্রে সরকারের সুস্পষ্ট অঙ্গীকার বাসত্মবায়নের লক্ষ্যে প্রণীত হয়েছে বহুল আলোচিত ‘‘স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন আইন’’ এবং সরকার ইতোমধ্যে স্বাধীন দুর্নীতিদমন কমিশনও গঠন করেছে, যা দুর্নীতিদমনে যথেষ্ট ভূমিকা  রাখছে।

বিশেষত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ইস্যুতে সরকার কঠোর অবস্থান নিয়েছে। ইতোমধ্যে ১৯৭৩ সালের ‘‘আমর্ত্মজাতিক অপরাধ (ট্রাইবুন্যাল) অ্যাক্ট’’ এর আওতায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে প্রসিকিউটর দপ্তর স্থাপন করা হয়েছে। দেশবাসীর সমর্থন ও আমর্ত্মজাতিক সহযোগিতার ভিত্তিতে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে সরকার বদ্ধপরিকার। তাছাড়া জাতির জনক বঙ্গবন্ধু হত্যা এবং জেলখানায় চারনেতা হত্যার বিচার কার্য সম্পন্ন করার বিষয়কেও সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে।

আমিষের চাহিদাপূরণে সরকারী মৎস্যপ্রকল্পসমূহ 
শাহ আলম বাদশা

          ছালেহার অপুষ্ট শরীর এমনিতেই চলেনা, বুকের দুধ পর্যমত্ম গেছে শুকিয়ে। এমনকি একবছর বয়সী ছেলেটির শরীরও পুষ্টিহীনতায় কংকালসার হয়ে গেছে। আসলে গরীবঘরের সমত্মান ছালেহার বাল্যবিবাহই ওর কাল হয়েছে। বাবার সংসারে এমনিতেই মাসে একদিন মাছ-গোস্তের দেখা পায়নি ; তারপর ১৩ বছর বয়সে বিয়ে হয়েছে দীনহীন এক ঠেলাওয়ালার সাথে। এখানে এসেও সে খুব একটা মাছ-মাংসের স্বাদ পায়নি। বছর না যেতেই আবার গর্ভে এসেছে অপুষ্ট একশিশু। কচু-গেঁচু খেয়ে আর যাহোক আমিষের চাহিদাতো পূরণ হওয়া সম্ভব নয়? তাই দেহগঠন, পুষ্টিসাধন, দেহের বলশক্তি, রোগপ্রতিরোধ শক্তি মা-ছেলের কারোর ভাগ্যে ভর করতে পারেনি। এখন তাই মরণদশা আর কি? ফলে ডাক্তার মা ও ছেলের জন্য ঔষধ, পথ্য এবং পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবারের যে তালিকা দিয়েছে তাতেই মাথা খারাপের যোগাড় ওর স্বামীর। এ ধরণের ঘটনা বাংলার ঘরে ঘরে এখন অহরহ দেখতে পাওয়া যায়। আমিষের অভাবে কত ছালেহার জীবনই না ঝরে যাচ্ছে, তার কি ইয়াত্তা আছে?

            এসব কারণেই দেশীয় প্রোটিনের চাহিদাপূরণ এবং আত্ননির্ভরশীলতা অর্জনের লক্ষ্যে ইলিশের জাটকানিধন প্রতিরোধ ও দেশীয় প্রজাতির বৈচিত্ররক্ষার জন্য সরকারিভাবে অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠার ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। পাশাপাশি জলমহল ও প­াবনভূমিসমূহ সমাজভিত্তিক মৎস্যব্যবস্থাপনার আওতায় আনা হয়েছে। মৎস্যজীবীদের ক্ষুদ্রঋণ প্রদানের মাধ্যমে বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।

            কৃষিনির্ভর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে মৎস্যসেক্টরের অবদান যেমন অত্যমত্ম গুরুত্বপূর্ণ ও সম্ভাবনাময় তেমনি জাতীয় আয়ের ৫.১৫% মৎস্যখাতের অবদান এবং কৃষি আয়ের ২৩% আসে মৎস্যখাত থেকে। তাই সরকার মাছের উৎপাদনবৃদ্ধির জন্য ‘‘বিল নার্সারি কর্মসূচির’’ আওতায় মুক্তজলাশয়ে ব্যপাক পোনাঅবমুক্তির কাজ হাতে নিয়েছে। একই সাথে জোরদার করা হচ্ছে উৎপাদক থেকে ভোক্তা পর্যমত্ম সকলসত্মরে মৎস্যজাত পণ্যের মাননিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা।

            দেশের মাছের মোট উৎপাদনের ৮০% আসে অভ্যমত্মরীণ জলাশয় থেকে এবং সামুদ্রিক জলাশয় থেকে আসে মাত্র ২০%। জলাশয়সমূহে মৎস্য উৎপাদনবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখতে ইতোমধ্যে ৬৪ জেলার ১৮০৫টি জলমহাল ও বর্ষাপ­াবিত ধানক্ষেতে প্রায় দেড়কোটি বিভিন্ন প্রজাতি পোনামাছ অবমুক্ত করা হয়েছে, যার ফলে গতবছর ৭০৬২ মেট্রিক টন মাছ অতিরিক্ত উৎপাদিত হয়েছে। এছাড়াও দেশীয় প্রজাতির মাছের বংশবৃদ্ধির জন্য ২৫০টি মৎস্য অভয়াশ্রম ও ইলিশের জন্য ৪টি অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ফলে মৎস্য উৎপাদনের পরিমাণ উলে­খযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

            উপকূলীয় অঞ্চলে মৎস্য অধিদপ্তরের অধীনে ইজারাকৃত বিভিন্ন চিংড়ি খামার থেকে বিগত ২০০৫-২০০৬, ২০০৬-২০০৭, ২০০৭-২০০৮ অর্থবছরের সরকারের রাজস্ব আয় হয়েছে তিনকোটি টাকার অধিক। বাগদা চিংড়ির হ্যাচারিসমূহ তাদের মানোন্নয়নের মাধ্যমে দেশের সকল চিংড়িখামারের চাহিদা মিটাতে সক্ষম হয়েছে। তাই সামুদ্রিক চিংড়িসম্পদকে ও তার মজুদকে সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে সমগ্র উপকূলীয় অঞ্চলে প্রাকৃতিক উৎস হতে
চিংড়িপোনা আহরণ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এতে সামুদ্রিক মাছ ও  চিংড়ির মজুদ বৃদ্ধি পাবে এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষিত হবে।

            মৎস্যখাতের উন্নয়নের প্রতিবন্ধকতা নিরসন এবং অনুকূল পরিবেশসৃষ্টির লক্ষ্যে পুষ্টিসমস্যা নিরসন, কর্মসংস্থানসৃষ্টি, দারিদ্রবিমোচন ও বৈদেশিক মুর্দ্রাজনের সম্ভাবনা ও অবদানের গুরুত্ব উপলব্দি করে মৎস্য আইন ১৯৫০ সংশোধন করে (Protection and convervation of fish amendment Act) জারী করা হয়। এ আইনের ২(১) ধারায় সকল প্রকার কারেন্ট জাল আমদানি, উৎপাদন, বিপণন ও ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করে শাসিত্মর বিধান রাখা হয়েছে।

            সারাদেশের আমিষের চাহিদাপূরণের লক্ষ্যে সরকার সুদূরপ্রসারী ও ব্যাপকভিত্তিক বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। সরকারী এডিপিভুক্ত বাসত্মবায়িত ও বাসত্মবায়নাধীন মৎস্যপ্রকল্পসমূহের মধ্যে উলে­খযোগ্য হচ্ছে -পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলায় মৎস্যচাষ সম্প্রসারণপ্রকল্প, বৃহত্তর নোয়াখালী জেলায় মৎস্যচাষ সম্প্রসারণপ্রকল্প, গলদা চিংড়িহ্যাচারি উন্নয়ন ও চাষপ্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রকল্প, বাগদাচিংড়ি চাষপ্রযুক্তি সম্প্রসারণপ্রকল্প, মৎস্যচাষ উন্নয়নপ্রকল্প ইফাদ, নওগাঁ জেলার সাপাহার উপজেলাধীন জবই বিলে মৎস্যচাষ উন্নয়নপ্রকল্প, সমন্বিত মৎস্যকার্যক্রমের মাধ্যমে দারিদ্রবিমোচন প্রকল্প-২য় ধাপ, নতুন জলমহাল নীতিমালা উন্মুক্ত ও বদ্ধ জলাশয়ে মৎস্যচাষ উন্নয়নপ্রকল্প, ময়মনসিংহ মৎস্যচাষ সম্প্রসারণ প্রকল্প-কনসোলিডেশন ফেইজ, উপজেলা পর্যায়ে মৎস্যচাষ সম্প্রসারণ প্রকল্প ২য় পর্যায়, পাবর্ত্যচট্টগ্রামের পাহাড়ি জলাশয়ে মৎস্যচাষ সম্প্রসারণপ্রকল্প, ব্রুডব্যাংক স্থাপনপ্রকল্প, দেশের পশ্চিমাঞ্চলে ছড়া ও বিলে মৎস্যচাষ উন্নয়নপ্রকল্প, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে মৎস্যসম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প-৩য় পর্যায় ম্যাচ কার্যক্রমের মাধ্যমে বিনিয়োগ সহায়তা প্রকল্প, এম্পাওয়ারমেন্ট অব কোস্টাল ফিশিং কমিউনিটি ফিশারিজ ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প-২য় পর্যায়, রিসার্চ ফল সাসটেইনেবল এ্যাকুয়া কালচার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট, পলিসি এন্ড প­ানিং সার্পোট ইউনিট, চিংড়িচাষ উন্নতকরণ কার্যক্রম, মৎস্যপণ্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ জোরদারকরণ প্রকল্প, ডেভেলপিং ন্যাশনাল শ্রিম্প সীড সার্টিফিকেশন সিস্টেম, অভ্যমত্মরীণ মুক্তজলাশয়ে মৎস্য আবাসস্থল পুনরুদ্ধারপ্রকল্প, ক্ষুদ্রাকায় জলাশয়ে মৎস্যসম্পদ উন্নয়নপ্রকল্প, সামুদ্রিক ক্ষুদ্র মৎস্যজীবিদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নপ্রকল্প, অভ্যমত্মরীন পুকুরজলাশয়ে সমন্বিত কার্প ও স্বাদুপানির চিংড়িচাষ সম্প্রসারণপ্রকল্প, ইউনিয়নপর্যায়ে মৎস্যসেবা সম্প্রসারণপ্রকল্প, প­াবনভূমমেত মৎস্যচাষ অবকাঠামো নির্মাণপ্রকল্প, মৎস্যবিপণন অবকাঠামো নির্মাণপ্রকল্প ও মৎস্য গবেষণা কর্মসূচি জোরদারকরণ ও প্রযুক্তি হসত্মামত্মরপ্রকল্প।

            এসব প্রকল্পের সফলমেয়াদী বাসত্মবায়ন সম্ভব হলে এক সময়ের মাছে-ভাতে বাঙালির হৃত ঐতিহ্য আবার যেমন ফিরে আসবে তেমনি মাছ রপ্তানী করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মূদ্রার্জনও এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ধর্মীয় নেতাদের অবদান
শাহ আলম বাদশা
 
মাওলানা মোসলেম উদ্দিন কুড়িগ্রাম জেলাধীন পাতিলাপুর মধ্যপাড়া জামে মসজিদের একজন ইমাম। তিনি পাঁচওয়াক্ত নামাজে ইমামতির পাশাপাশি ১৯৮৭-৮৮ সালে রাজশাহী ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমী থেকে দেড়মাসব্যাপী মূল প্রশিক্ষণগ্রহণের পর ‘মানবসম্পদ উন্নয়নে ধর্মীয় নেতাদের সম্পৃক্তকরণ’ প্রকল্পের অধীনেও প্রশিক্ষণগ্রহণ করেন। তিনি আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, দারিদ্র্যবিমোচনের লক্ষ্যে কৃষি, হাঁস-মুরগির খামার, বৃক্ষরোপন, স্যানিটেশন, নিরক্ষরতাদূরীকরণ, পুষ্টিসচেতনতা, উন্নত পরিবেশসংরক্ষণ ইত্যাদি বিষয়ে ব্যাপক গণসচেতনতাসৃষ্টির পাশাপাশি এসবে নিজেকেও নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত করেছেন। এভাবে কুড়িগ্রামজেলা ও রাজশাহী বিভাগের মানবসম্পদ উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখায় তাকে ২০০৫ সালে জেলা ও বিভাগীয়পর্যায়ে শ্রেষ্ঠইমাম হিসেবে পুরস্কৃত করা হয়। ‘মানবসম্পদ উন্নয়নে ধর্মীয় নেতাদের সম্পৃক্তকরণ’ প্রকল্পের অধীনে প্রশিক্ষণগ্রহণের পর তিনি এলাকার জনসাধারণের মাঝে প্রজননস্বাস্থ্যসেবা, বাল্যবিবাহ ও যৌতুক প্রতিরোধ, আদর্শ পরিবারগঠন, সন্ত্রাস ও মাদকাসক্তিরোধ, নিরাপদ মাতৃত্ব, নারীশিক্ষার গুরুত্ব এবং অধিকারপ্রতিষ্ঠা, নারী ও শিশুপাচাররোধ, এইচআইভি/এইড্স থেকে মুক্তি, গণশিক্ষা এবং আর্থ-সামাজিক বিভিন্ন উন্নয়নমূলক বিষয়ে বক্তব্য দিয়ে থাকেন। প্রশিক্ষণের আলোকে তিনি মৎস্যখামার প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্নমুখী কার্যকলাপে জড়িত আছেন। এজন্যই মানবসম্পদ উন্নয়নে ব্যাপক অবদানের জন্য সরকার তাকে ২০০৫ সালের জাতীয়পর্যায়ের শ্রেষ্ঠইমাম হিসেবেও পুরস্কৃত করেন।

শ্রেষ্ঠইমাম হিসেবে পুরস্কৃত আরো কতিপয় ইমামের অবদান এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে। কুষ্টিয়া ঈদগাহপাড়া জামে মসজিদের খতিব ও পেশইমাম আফম নাজমুস সালেহীন খুলনাবিভাগের শ্রেষ্ঠইমাম ছাড়াও ২০০৩ সালে জাতীয়পর্যায়ে শ্রেষ্ঠইমাম নির্বাচিত হন। প্রশিক্ষণের আলোকে মৎস্যখামার প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সেবামূলক কাজে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য তাকে পুরস্কৃত করা হয়। সিলেট উপজেলাপরিষদ জামে মসজিদের পেশইমাম হাফিজ ইদ্রিস আহমদ নিরাপদমাতৃত্ব, বাল্যবিবাহ নিরুৎসাহিতকরণ, মা ও শিশুঅধিকারসহ বিভিন্নপ্রকার উন্নয়ন ও সেবামূলক কাজের স্বীকৃতস্বরূপ ২০০৩ সালে সিলেট বিভাগীয়পর্যায়ের শ্রেষ্ঠইমাম নির্বাচিত হন। বৃক্ষরোপন, স্যানিটেশন, এইড্সপ্রতিরোধসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য সিলেটের শাহ ফরিদ মসজিদের ইমাম মাওলানা আবুল কালাম আজাদকে ২০০৩ সালের ঢাকা বিভাগীয়পর্যায়ের শ্রেষ্ঠইমাম নির্বাচিত করা হয়। একজন সফল ইমাম হিসেবে বরিশালের সড়কভবন মসনজিদের পেশইমাম মাওলানা আব্দুস সালাম ২০০৩ সালের বরিশাল বিভাগীয়পর্যায়ে শ্রেষ্ঠইমাম নির্বাচিত হন। বৃক্ষরোপন, স্যানিটেশন, মসজিদপাঠাগার প্রতিষ্ঠা, এইড্স ও মাদকাসক্তিরোধ, পরিবেশরক্ষার বিষয়ে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য রাজশাহীর বামনদিঘী মধ্যপাড়া জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা কাজী সাদিকুল ইসলামকে ২০০৩ সালের রাজশাহী বিভাগীয়পর্যায়ের শ্রেষ্ঠইমাম নির্বাচিত করা হয়। স্যানিটেশন, এইড্স, বাল্যবিবাহ, যৌতুক ও সন্ত্রাসরোধ, শিশু ও নারীর অধিকার বিষয়ে অবদানের জন্য চট্টগ্রামের সাতবাড়ীয়া জামে মসজিদের পেশইমাম মাওলানা মাহবুবুল হাসান ২০০৩ সালে চট্টগাম বিভাগীয়পর্যায়ের শ্রেষ্ঠইমাম নির্বাচিত হন। অনুরূপভাবে রাজবাড়ীর সেনগ্রাম মাদ্রাসা মসজিদের ইমাম আওয়াবুল্লাহ ইব্রাহীম ও ময়মনসিংহের দাউদপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম মাও. আব্দুর রহমানকে যৌথভাবে ঢাকা বিভাগীয়পর্যায়ে ২০০৫ সালের শ্রেষ্ঠইমাম, চাঁদপুর পুরাতন ফেরিঘাট জামে মসজিদের ইমাম মাও. আহসানুল করীম আল্ আযহারী ও চট্টগ্রামের নুরে মোহাম্মদী জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মাও. মহিউল হককে যৌথভাবে ২০০৫ সালে চট্টগ্রামবিভাগের শ্রেষ্ঠইমাম, ঝিনাইদহের আদর্শ আন্দুলিয়া  জামে মসজিদের ইমাম মাও. মঈন উদ্দিন ও কুষ্টিয়ার মহদীপুর জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মাও. আব্দুল হান্নানকে যৌথভাবে খুলনাবিভাগের শ্রেষ্ঠইমাম, পাবনার  বনওয়ারী নগর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম মাও. জহুরুল হক সাবেরীকে রাজশাহীবিভাগের শ্রেষ্ঠইমাম, ঝালকাঠির জুরকাঠি বামনকাঠি মফিজিয়া  জামে মসজিদের ইমাম মাও. এইচ এম মশিউর রহমানকে বরিশালবিভাগের শ্রেষ্ঠইমাম এবং সুনামগঞ্জের চিক্কা জামে মসজিদের ইমাম মাও. আবদুর রহমানকে সিলেটবিভাগের  শ্রেষ্ঠইমাম নির্বাচিত করা হয়।  গাজীপুরের মাও. মমতাজ উদ্দিন ২০০৬ সালের জাতীয়পর্যায়ের শ্রেষ্ঠইমাম, ঢাকার মাও. মুফতী আব্দুস সাত্তার ঢাকাবিভাগের ২০০৬ সালের শ্রেষ্ঠইমাম, চট্টগ্রামের মাও. আবুল কালাম আজাদ ও খাগড়াছড়ির কে এম আবদুস সুবহান যৌথভাবে ২০০৬ সালের চট্টগ্রামের শ্রেষ্ঠইমাম, সুনামগঞ্জের মাও. মুজিবর রহমান ও সিলেটের মাও. আলাউদ্দিন বিশ্বাস ২০০৬ সালের সিলেটবিভাগের  যুগ্ম শ্রেষ্ঠইমাম, বাগেরহাটের মাও. আবু তালিব খান খুলনাবিভাগের শ্রেষ্ঠইমাম এবং বগুড়ার মাও. বেলাল হোসেন রাজশাহীবিভাগের শ্রেষ্ঠইমাম নির্বাচিত হয়েছেন। 
      
উল্লেখ্য, ১৯৯৪ সালে কায়রোয় অনুষ্ঠিত ‘জনসংখ্যা ও উন্নয়ন’ সম্মেলন’ এবং ১৯৯৫ সালে বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত ‘ওয়ার্ল্ড উইমেন‘স প্লাটফরম অব অ্যাকশন’ এর পরিপ্রেক্ষিতে ‘‘প্রজননস্বাস্থ্য ও জেন্ডার ইস্যু’’ বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে স্থানলাভ করে। জনসংখ্যা ও উন্নয়ন বিষয়ক সম্মেলনে আগামী ২০১৫ সালের মধ্যে যেসব লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে (১) সবার জন্য উচ্চতর গুণগত মানসম্পন্ন প্রজননস্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করার মাধ্যমে পরিকল্পিত পরিবারগঠন ও জনসংখ্যার স্থিতি আনয়ন করা (২) সমাজের সর্বস্তরের মহিলাদের অধিকারসংরক্ষণ ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা (৩) মাতৃ ও শিশুমৃত্যুর হার কমিয়ে আনা ইত্যাদি। এধরণের জনগুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচিসমুহের সফল বাস্তবায়নের জন্য সমাজের অত্যন্ত প্রভাবশালী ধর্মীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সমর্থনলাভ এবং তাদের সক্রিয় সম্পৃক্ততা যে অত্যন্ত জরুরি, তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। কেননা এদেশে মূল্যবোধের প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে সাধারন জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে এবং তাদের ধারণা ও আচরণগত দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আনয়নের ক্ষেত্রে ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের সম্পৃক্ত হবার যেমন রয়েছে অপূর্ব সুযোগ, তেমনি তাদের যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারলে সবচে ভালো ফলাফল পাওয়াও স্বাভাবিক। কারণ সামাজিক মূল্যবোধসৃষ্টি ও সংরক্ষণের ক্ষেত্রে ধর্মীয় নেতা বিশেষত; ইমামগণের রয়েছে যাদুকরী ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। অতীতে পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা হিসেবে ইসলামধর্ম সম্পর্কে সমাজে যে সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় পাওয়া যেতো, আজকাল ইসলামের সঠিক ব্যাখ্যা ও উদার দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপক প্রসারের কারণে সে ধারণা আর বিদ্যমান নেই। ফলে বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ কার্যক্রমে সক্রিয় সহযোগী হিসেবে ধর্মীয় নেতৃবৃন্দকে পাওয়া মোটেই অসম্ভব নয়। সুতরাং স্থানীয় জনগণের প্রজননস্বাস্থ্য ও অধিকার (Reproductive health and rights), নিরাপদ মাতৃত্ব, পরিকল্পিত পরিবার, এইচআইভি/এইড্স এবং নর-নারীর সামাজিক বৈষম্যদূরীরণের মাধ্যমে সমতা আনয়নের জন্য এসময় ইমামগণের নিবিড় সম্পৃক্ততা ও অংশগ্রহণবৃদ্ধির পদক্ষেপগ্রহণ অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত ও যুগোপযোগী বটে। তাই দু‘লক্ষ সত্তর হাজার মসজিদের পাঁচলক্ষাধিক ইমাম ও বাংলাদেশের মুয়াজ্জিন ১৪কোটি মানুষকে মূল্যবান সম্পদ হিসেবে গড়ে তুলে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখতে পারেন অনায়াসেই। তারা দৈনিক  পাঁচওয়াক্ত নামাজে ইমামতির সাথেসাথে নিজেদের মেধা ও শ্রম এবং মসজিদের বিদ্যমান অবকাঠামোগত সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে সহজেই জাতীয় উন্নয়নে এগিয়ে আসতে পারেন।

উপরোক্ত উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই ধর্মীয় নেতাদের জনসংখ্যা কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে এবং ‘প্রজননস্বাস্থ্য ও জেন্ডার ইস্যু’ এর গুরুত্ব অনুধাবন করে জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (UNFPA) এর অর্থায়নে ধর্মমন্ত্রণালয় ‘‘মানবসম্পদ উন্নয়নে ধর্মীয় নেতাদের সম্পৃক্তকরণ’’ শীর্ষক প্রকল্পটি হাতে নেয়। ২কোটি ৫২লক্ষ  টাকা ব্যয়সম্বলিত প্রকল্পটির প্রথমপর্যায়ের মেয়াদ ছিল ১৯৯৯-২০০২ সাল এবং এসময় প্রায় সাড়ে ১৫হাজার ইমামকে প্রশিক্ষণদান করা হয়েছে ও ১২৮জন ইমামকে প্রশিক্ষক হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। এছাড়া ৬৪টি জেলায় বিভিন্ন পেশাজীবী ব্যক্তির সমন্বয়ে ৩২০টি পরামশর্কসভাও অনুষ্ঠিত হয়। প্রথমপর্যায়ের সফল বাস্তবায়নের কারণে UNFPA (ইউএনএফপিএ) কর্তৃৃক প্রকল্পটিকে ‘সফল প্রকল্প’ হিসেবে স্বীকৃতিদান করা হয়েছে। দ্বিতীয়পর্যায়ে ৪কোটি সাড়ে ৩৩লাখ টাকা ব্যয়ে ২০০৩ থেকে ২০০৫ সাল মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়। এ মেয়াদে প্রায় সাড়ে ১৬হাজার ইমামকে প্রশিক্ষণদান এবং ২০৩জনকে প্রশিক্ষক হিসেবে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। তাছাড়া জেলা-উপজেলাপর্যায়ে ৩৮৪টি পরামশর্কসভা করা হয়। এ পর্যায়ে ইমামগণের পাশাপাশি হিন্দু ও বৌদ্ধধর্মীয় নেতাদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করা হয় এবং ধর্মভীরু মুসলিম নারীদের প্রশিক্ষণদানের কার্যক্রমও অন্তর্ভূক্ত করা হয়। ফলে ২য়পর্যায়ে ৩,০৪০জন হিন্দুধর্মীয় নেতা, ৩৯০জন বৌদ্ধধর্মীয় নেতা ও ৪৮০জন মুসলিম মহিলাকে প্রশিক্ষণদান করা সম্ভব হয়। প্রকল্পটির সফলতা বিবেচনা করে ৮কোটি ৪৪লক্ষ টাকার (বৈদেশিক সহায়তা ৮৩৪.০০ লাখ) তৃতীয়পর্যায়ের কার্যক্রম শুরু করা হয় ২০০৬ সালের জানুয়ারিমাসে। এর মেয়াদকাল ২০১০সাল পর্যন্ত এবং এর কার্যক্রম বর্তমানে ৬৪টি জেলাতেই বিস্তৃত। প্রকল্পটির বাস্তবায়নকৌশল হিসেবে  ধর্মমন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ৭টি ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমি ও জেলাপর্যায়ের কার্যালয়সমূহের অধীন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ইমামদ্বারা সাপ্তাহিক জুম্মার নামাজের খুৎবাহ, মিলাদমাহফিল, বিবাহ অনুষ্ঠান ও অন্যান্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সমাজের সর্বস্তরের জনগণকে কর্মসূচিতে পরামর্শদাতা হিসেবে সম্পৃক্তকরণছাড়াও হিন্দুধর্মীয় কল্যাণট্রাস্ট ও বৌদ্ধধর্মীয় কল্যাণট্রাস্টের মাধ্যমে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ধর্মীয় নেতাদের দ্বারাও গণসচেতনতাসৃষ্টি এবং বৃদ্ধির কাজ চলছে।
  এ প্রকল্পের মূলউদ্দেশ্য হচ্ছে- একটি আদর্শ পরিবারগঠনের লক্ষ্যে জনসাধারণকে প্রজননস্বাস্থ্য, জেন্ডার ইস্যু, এইচআইভি/এইড্স সম্পর্কে জ্ঞানদান এবং পরিবারকল্যানের মাধ্যমে জনসংখ্যার স্থিতি আনায়নে সহায়তা করা; প্রজননস্বাস্থ্য, জেন্ডার ইস্যু ও পরিবারকল্যানের অনুকূল পরিবেশতৈরির ক্ষেত্রে জনসাধারণের আচরণগত পরিবর্তনের জন্য সক্রিয়তাবৃদ্ধিতে পরামর্শদাতা হিসেবে ধর্মীয় নেতাদের সম্পৃক্ত করা; প্রকল্পমেয়াদে ১৮হাজার ধর্মীয় নেতাকে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে প্রজননস্বাস্থ্য, জেন্ডার ইস্যু, এইচআইভি/এইড্স, পরিবারকল্যাণ, নিরাপদ মাতৃত্ব, মাদকাশক্তি ও পরিবেশসংরক্ষণ ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষণদানসহ উপজেলাপর্যায়ে ৬৪০টি পরামর্শকসভার আয়োজন এবং এসময়ে ২,৮৫০জন মুসলিম নারী ও ৪০০জন কাজিকে একই বিষয়ে প্রশিক্ষণদান করা। এছাড়া প্রকল্পের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে- (ক) দেশের ৬৪টি জেলার ২৬০জন ধর্মীয় নেতা ও জেলাকর্মকর্তাকে প্রজননস্বাস্থ্য, জেন্ডার ইস্যু, এইচআইভি/এইড্স, নিরাপদ মাতৃত্ব ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষনদানের মাধ্যমে প্রশিক্ষক হিসেবে গড়ে তোলা; (খ) ১৫হাজার ইমামকে প্রজননস্বাস্থ্য, নিরাপদ মাতৃত্ব ও শিশুস্বাস্থ্য পরিচর্যা, পরিবারকল্যাণ, নারীর অধিকারসংরক্ষণ, এইচআইভি/এইড্স ও মানবস্পদ উন্নয়নের ওপর প্রশিক্ষণপ্রদান করে জনসংখ্যা কার্যক্রমে ইমামগণকে সম্পৃক্ত করা; (গ) ২৪০০জন হিন্দুধর্মীয় নেতা, ৬০০জন বৌদ্ধধর্মীয় নেতা,  ২,৮৫০জন ধর্মভীরু মুসলিম নারী ও ৪০০জন কাজিকে উক্ত বিষয়ের ওপর প্রশিক্ষণদান করা; (ঘ) প্রজননস্বাস্থ্য ও অধিকার এবং জেন্ডার ইস্যু বিষয়ে দেশের প্রতিটি জেলার উপজেলাপর্যায়ে ১০টি করে মোট ৬৪০টি পরার্শকসভার আয়োজন করা; (ঙ) প্রশিক্ষণোত্তর ইমামদের ফলোআপ কার্যক্রমকে জোরদার করার লক্ষ্যে বিভাগপর্যায়ে ১৪টি, জাতীয়পর্যায়ে ৩টি সম্মেলন ও জেলাপর্যায়ে ৩২০টি কোর-লিডার প্রশিক্ষণকোর্সের আয়োজন করা; (চ) প্রশিক্ষণ কারিকুলাম উন্নয়নে মাঠপর্যায়ের বাস্তবায়ন কার্যক্রমকে কার্যকর করার জন্য প্রশিক্ষকদের নিয়ে ৫টি বার্ষিকসভার ব্যবস্থা করা এবং (ছ) প্রজননস্বাস্থ্য, পরিকল্পিত পরিবার, এইচআইভি/এইড্স ও নারীর অধিকার বিষয়ে বাস্তব জ্ঞানলাভের জন্য শিক্ষাসফরের আয়োজন করা।

উল্লেখ্য যে, তৃতীয়পর্যায়ে জানুয়ারি’০৬ থেকে ডিসেম্বর’০৬ পর্যন্ত ছয়মাসে ৬৪টি জেলার প্রায় ১৮০০জন ইমাম, হিন্দুধর্মীয় কল্যাণট্রাস্টের মাধ্যমে প্রায় ৩০০জন হিন্দুধর্মীয় নেতা এবং বৌদ্ধধর্মীয় কল্যাণট্রাস্টের আওতায় প্রায় ৪০০জন বৌদ্ধধর্মীয় নেতাকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এছাড়া এপর্যন্ত ৬০০জন মুসলিম মহিলাকেও প্রশিক্ষণদান করা হয়েছে। সুতরাং ’’মানবসম্পদ উন্নয়নে ধর্মীয় নেতাদের সম্পৃক্তকরণ‘‘ প্রকল্পটি ২০১০ সালে সফলভাবে সুসম্পন্ন হলেই দেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে পাঁচলক্ষাধিক ইমাম-মুয়াজ্জিনছাড়াও অন্যান্য ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের ব্যাপক অবদান সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হবে বলে আশা করা যায়। প্রসঙ্গক্রমে সাম্প্রতিককালে ইমামদের সবচে বড় অবদানের কথাটি এখানে না বললেই নয়। আর তা হচ্ছে, সন্ত্রাসী শায়খ আবদুর রহমান ও বাংলা ভাইর নেতৃত্বে সারাদেশে হত্যা এবং সিরিজ বোমাহামলার বিরুদ্ধে মসজিদের ইমামগণ শেষমূহুর্তে যদি একযোগে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ ও সামাজিক আন্দোলন গড়ে না তুলতেন, তবে ইসলামের নাম ব্যবহারকারী এসব ভন্ডদের এত সহজেই পাকড়াও করা সম্ভব ছিলনা। যখুনি জাতীয় মসজিদের খতিব ফতোয়ার মাধ্যমে এদের প্রতিরোধের ডাক দিলেন, অমনি দেশের আনাচে-কানাচে গড়ে উঠলো ইমাম-জনতার নিচ্ছিদ্র প্রতিরোধব্যুহ। ফলে আত্মগোপনকারী জঙ্গীরা আর পালাবার পথ খুঁজে পেলোনা, দ্রুত ধরা পড়ে গেলো এবং ফাঁসি কার্যকরের মাধ্যমেই ঘটলো এদের নবসন্ত্রাসের যবনিকাপাত!