বার্ডফ্লু এবং সরকারী প্রতিরোধকার্যক্রম
শাহ আলম বাদশা
বার্ডফ্লু হচ্ছে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা, যা আপাতদৃষ্টিতে পশু-পাখি বা হাঁস-মুরগির একটি মারাত্মক সংক্রমনজনিত ভাইরাল রোগ। এ ছোঁয়াচে রোগ সাধারণত আক্রামত্ম শুকর, পাখি, হাঁস-মুরগি, কবুতর ও জলজ সত্মন্যপায়ী প্রাণী থেকে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। এ রোগে আক্রামত্ম মানুষের জ্বর, কাঁশি, গলাব্যথা, মাংসপেশীতে ব্যথা, ফুসফুসপ্রদাহ ইত্যাদিসহ তীব্র শ্বাসকষ্ট এমনকি মৃত্যু পর্যমত্ম হতে পারে। এ টাইপের ভাইরাসের দ্রম্নত বিবর্তন ঘটে, যার মধ্যে রয়েছে মানুষের মারাত্মক রোগসৃষ্টি করার ক্ষমতা।। যেসব পাখি বার্ডফ্লুতে আক্রামত্ম হবার পরও বেঁচে থাকে, তাদের শ্বাস ও বিষ্টার সঙ্গে অমত্মত ১০দিন পর্যমত্ম এ ভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে। এটি সর্বপ্রথম ১৯৭৮ সালে ইতালীতে শনাক্ত করা হয়। বিজ্ঞানীরা ধারণা করেছিলেন যে, এ ভাইরাসে সাধারণত শুকর বা পাখি ব্যতীত অন্যান্য প্রজাতির প্রাণী আক্রামত্ম হয়না। কিন্তু ১৯৯৭ সালে হংকংয়ে মুরগি থেকে মানুষের দেহে এ ভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার তথ্য প্রকাশিত হবার পর সে ভুল ধারণা ভেঙ্গে যায়।
বার্ডফ্লুর প্রধান লক্ষণ হচ্ছে- হাঁস-মুরগির পালক এলোমেলো হওয়া, নরম খোসাযুক্ত ডিম, ডিমপাড়া কমে যাওয়া, অবসাদগ্রসত্মতা ও ঝিমানী, ক্ষুধামন্দা, সবুজরঙ্গের ডায়রিয়া দেখা দেয়া, মোরগের ঝুঁটি বেগুণিরঙ ধারণ করা ও ফুলে যাওয়া, শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হওয়া, নাসারন্ধ্র থেকে রক্তমিশ্রিত শেস্নষ্মা বের হওয়া, আক্রামেত্মর মৃত্যুহার বৃদ্ধি পাওয়া ইত্যাদি। এ ভাইরাস পাখির অন্ত্রে অবস্থান করে, যা বিষ্ঠা, ও মলের সাথে বের হয়ে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে এ রোগ অন্য পশু-পাখি বা মানুষের দেহে প্রবেশ করে ২/৪দিনের মধ্যে মৃত্যু ঘটায়। মারাত্মক ছোঁয়াচে রোগটি সংক্রমিত পাখির ডিম ভেঙ্গে গেলে, আক্রামত্মদের বিচরণে, সংক্রমিত স্থানের যন্ত্রপাতি, খামারের খাদ্য ও পানীয়ের পাত্র, খামারীদের কাপড়-চোপড়, জুতা বা অন্যান্য ব্যবহার্য বস্ত্ত ইত্যাদির মাধ্যমে বিস্তৃত হয়ে থাকে। তবে মুরগি থেকে মুরগিতে এ ভাইরাস অতিদ্রম্নত ছড়িয়ে পড়ে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অতীতে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রাদুর্ভাব ঘটেছে এবং সকল দেশই তা সফলভাবে মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছে। এজন্য আতঙ্কের তেমন কিছু নেই। বাংলাদেশে এ রোগটি একবারেই নতুন এবং কয়েকবছর ধরেই দেখা দিচ্ছে। চলতি শীতমওসুমে প্রতিবেশী ভারতে বার্ডফ্লু জেরেশোরে দেখা দিলেও এদেশে এখনো খুব একটা ছোঁয়া লাগেনি। শীতশুরম্নর পর এ পর্যমত্ম দেশের ৪৭টি জেলার ১৩০টি উপজেলায় মোট ৫৫৫টি খামার কালিং করা হয়। ভারত সরকার কোটি কোটি মুরগিনিধন করলেও এদেশে নিধন করতে হয়েছে মাত্র ১৬লাখ ৪৭হাজার ৭৩৪টি আক্রামত্ম মুরগি এবং ২২লাখ ২২হাজার ৭৮০টি ডিম।
বার্ডফ্লু প্রতিরোধে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় নিয়মিত সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা দিয়েছে। বলা হয়েছে যে, খালিহাতে অসুস্থ বা মৃত হাঁস-মুরগি বা অন্যান্য পাখি ধরা-ছোঁয়া ও নাড়াচাড়া করা যাবেনা। মৃত হাঁস-মুরগি ও পাখিকে অবশ্যই মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে। এগুলো ধরতে হাতে গস্নাভস্ বা পরিথিন এবং মুখে মাস্ক বা শুকনো কাপড় ব্যবহার করতে হবে। যদি কোথাও হঠাৎ হাঁস-মুরগি কিংবা পাখির মড়ক দেখা যায়, সাথে সাথে নিকস্থ হাসপাতাল, পশুসম্পদ অফিস, স্বাস্থ্যকর্মী, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ইউপি সদস্য বা ওয়ার্ড কমিশনারকে জানাতে হবে।
রোগে আক্রামত্ম মুরগি নাড়াচাড়া বা জবাই করা যাবেনা। শিশুদের এগুলো থেকে দূরে রাখতে হবে। ডিম ভালোভাবে সাবান অথবা সোডা দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। পুরোপুরি সিদ্ধ বা দু‘পিঠ ভালো করে ভেঁজে খেতে হবে। অর্ধসিদ্ধ ডিম বা গোস্ত খাওয়া যাবেনা। হাঁস-মুরগির গোসত্ম ভালোভাবে সিদ্ধ করে রান্না করতে হবে। হাঁস-মুরগি ও পাখি ধরা-ছোঁয়ার পর যদি দুই সপ্তাহের মধ্যে সর্দি-কাঁশি হয়, তবে দ্রম্নত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। হাঁস-মুরগি ও পাখির বিষ্ঠা ও মল সার বা খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যাবেনা।
তবে বার্ডফ্লু আক্রমণের কোনো প্রভাব এবার কিন্তু ডিম ও মুরগি বাজারে পড়েনি। কারণ এবার বার্ডফ্লু আক্রমনের শুরম্নতেই তড়িৎ প্রতিরোধভবস্থা গ্রহণ করায় জনমনেও কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়নি, যা দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গলজনক বৈকি?।