30.5.11


এইডস্ থেকে বাঁচুন-পবিত্র জীবনযাপন করুন
শাহ আলম বাদশা

          প্রবাসজীবনই শমসেরের কাল হলো। বাপ-মার মুখে হাসি ফুটাবার আশায় সে অনেক টাকা খরচ করে গিয়েছিল আমেরিকায়। কিন্তু মরণব্যাধি এইড্স তাকে বাঁচতে দিলো না। তিনবছরের মাথায় তাকে মরণাপন্ন অবস্থায় আসতে হলো দেশে। চিকিৎসাপত্র যা হবার বিদেশেই হয়েছে। কিন্তু আর বাঁচার সম্ভাবনা না থাকায় তাকে পাঠানো হয় দেশে। এভাবে পাচশ্চাত্যে সৃষ্ট এ রোগের ভাইরাস শমসেরের মতো অনেকেই আজ দেশে দেশে ছড়িয়ে যাচ্ছে।

          ১৯৫৯ সালে প্রথম ব্রিটেনে এক লোকের রক্তে এইড্সের ভাইরাস পাওয়া যায়। ১৯৭০-এর দশকে এটি আফ্রিকায় ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৮১ সালে একে মারাত্মক ব্যাধি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু ১৯৮৫ সালে হলিউড খ্যাত হাডসন এ রোগে মারা যাবার পর বিশ্বব্যাপী আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এর প্রথম আবির্ষ্কতা লুই পাস্ত্তর। আর AID's-এর পূর্ণ নাম হচ্ছে- Aquired Immune Deficiency Syndrome বা অর্জিত প্রতিরক্ষা ক্ষমতাহ্রাস উপসর্গমালা। এ রোগ মারাত্মক রেক্টো ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হয়। ভাইরাটির নাম HIV ev Human Immune Deficiency Virus, যা মানুষের দেহের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে ফেলে। ফলে মানুষ সহজেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।

          বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী বর্তমান বিশ্বের ১৬৪টি দেশে এইড্স রোগী আছে। আমেরিকা, হাইতি ও আফ্রিকায় এ রোগের ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটলেও এশিয়া মহাদেশের মধ্যে ভারতেই এ রোগের প্রকোপ সবচে বেশী। আশংকা করা হচ্ছে- ভবিষ্যতে এক্ষেত্রে ভারত আফ্রিকাকেও ছাড়িয়ে যাবে। বিশ্বে প্রতিদিন এইড্স আক্রান্ত হচ্ছে প্রায় ৭ হাজার লোক। প্রতিদিন মরছে প্রায় ৬ হাজার জন। আফ্রিকায় ১৫-২৪ বছর বয়সী প্রতি তিনজন তরুণীর একজন ও প্রতি ৭ জন তরুণের একজন এইডসে আক্রান্ত। পতিতাপ্রধান থাইল্যান্ডে এইডসের ইতিহাস উপমহাদেশে সবচে পুরনো। দেশটিতে এইড্স রোগী আছে প্রায় ৮ লাখ। যদিও বাংলাদেশ এখনও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় নেই; তবুও রোগের কোন ভৌগোলিক সীমানা থাকায় ভবিষ্যতে আমরাও আশঙ্কামুক্ত নই।

বাংলাদেশে প্রথম এ রোগ ধরা পড়ে ১৯৮৯। এ পর্যন্ত দেড়হাজার জনের দেহে HIV জীবাণু পাওয়া গেলেও চারশতজনের মতো এইড্স রোগী শনাক্ত হয়েছে, মারা গেছে ১৩০ জন। তাই আমাদের দেশে আগাম প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য এখনই সময়।

          এমন এক সময় ছিল যখন কুষ্ঠরোগের মতো এইড্সের নামও কেউ নিতে চাইতো না বা লজ্জা পেতো। এখন পরিবর্তিত অবস্থার প্রেক্ষাপটে লজ্জা-ভয় ছেড়ে এইড্সের কারণ ও প্রতিরোধ ব্যবস্থার কথা আমাদের স্বার্থেই আমাদের সুস্পষ্টভাবে জানতে হবে এবং মানতে হবে। এইড্স রোগের মারাত্মক দিক হলো- প্রথমে রোগী বুঝতেই পারে না যে, সে এইড্সে আক্রান্ত। যখন জানে তখন আর করার কিছুই থাকে না।
         
            যৌনমিলনের মাধ্যমেই সবচে বেশি মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়। পশুগামিতা, বহুগামিতা, সমকামিতা ইত্যাদি বিকৃত যৌনাচারের কারণেই এ রোগের উৎপত্তি বলে ধারণা করা হয়। কেননা আমেরিকার একপ্রকার বানর থেকে এর জীবাণু ছড়ায় বলে সন্দেহ করা হয়ে থাকে। পাশ্চাত্যের ফ্রি-সেক্স বা কুকুর, ঘোড়া, গরু, ছাগল, বানরসহ অন্যান্য পশু-পাখির সাথে হর্সকক, ডগকক, মাংকিকক নামের আড়ালে নোংরা যৌনাচারই এজন্য দায়ী বলে অনেকে মনে করেন। কেননা এটি একটি নতুন রোগ, যা আগে কখনোই ছিল না। তাই তো হাদিসে বলা হয়েছে- ‘এমন এক সময় আসবে যখন নতুন নতুন মারাত্মক ব্যাধি সৃষ্টি হবে-যার নাম মানুষ এর আগে কখনো শোনেনি।’ যৌনমিলনের মাধ্যমে ৮০-৯০ শতাংশ মানুষ এইড্সে আক্রান্ত হয় বলে গবেষণায় জানা গেছে। তাই এ রোগের বিস্তৃতিরোধ করার সবচে বড় উপায় হলো পবিত্র ও নিয়ন্ত্রিত যৌনমিলন এবং জীবনযাপন।

ইসলাম ধর্মের বাস্তব ও বিজ্ঞানসম্মত আচার-আচরণ মেনে চললে সম্পূর্ণ এইড্সমুক্ত থাকাও সম্ভব বলে আজ গবেষকসহ বিজ্ঞানী এবং রোগ বিশেষজ্ঞরাও পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এজন্যই জাতিসংঘসহ বিশ্বসংস্থাসমূহ এখন যৌনমিলনের ক্ষেত্রে কঠিন সতর্কতারোপ করার পক্ষপাতি। এইড্স আক্রান্ত স্বামী বা স্ত্রীর যথাযথ চিকিৎসার পাশাপাশি যৌনমিলনে কনডম বা অন্যকান প্রতিরোধব্যবস্থা গ্রহণ না করার মানেই হলো এতে আরেকজনের আক্রান্ত হওয়াকে নিশ্চিত করা। তাই সর্বোচ্চ সতর্কতা হিসেবে অবশ্যই যৌনমিলনে কনডম ব্যবহার করতে হবে। এইড্স আক্রান্ত মায়ের দুধ পান করলেও শিশুর এইড্স হবে, এইড্স আক্রান্ত রোগীর রক্ত সুস্থ মানুষ গ্রহণ করলে তারও এইড্স হতে বাধ্য। এইড্স রোগীর ব্যবহৃত সূঁচ-সিরিঞ্জ জীবাণুমুক্ত না করে সুস্থদেহে পুশ করলে সংশি­ষ্ট ব্যক্তিরও এইড্স হবে। এইড্স আক্রান্ত ব্যক্তির অঙ্গ কোন সুস্থ ব্যক্তির দেহে প্রতিস্থাপন করলে তার এইড্সে আক্রান্ত হওয়াও অবধারিত।

          এইড্স আক্রান্ত রোগীর পূর্বলক্ষণ হচ্ছে-ওজন ১০% এরও বেশী কমে যাওয়া, দীর্ঘমেয়াদি পাতলা পায়খানা, একমাসের বেশী শুকনো কাঁশি, সারাদেহে চুলকানিজনিত চর্মরোগ, মুখ ও গলায় অাঁঠালো ফেনাযুক্ত একপ্রকার ঘা হওয়া, নাসিকাগ্রন্থি ফুলে যাওয়া, স্মরণশক্তি ও বুদ্ধিমত্তা কমে যাওয়া, ক্লান্তি ও ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়া, একমাসের বেশী জ্বর বা জ্বরজ্বরভাব ইত্যাদি। তবে পরীক্ষায় নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত এসব লক্ষণই চূড়ান্ত বিষয় নয়। এজন্য সন্দেহ হলে রক্ত পরীক্ষা করা যেতে পারে। নবসৃষ্ট এ মরণব্যাধিকে প্রবাসী রোগ বললেও অত্যুক্তি হবেনা ; তাই যারা প্রবাসী পাত্রের জন্য লালায়িত ও পাগলপারা তাদের সর্বোচ্চ সতর্কতারোপ করা উচিৎ যে, সৎ, সুস্থ ও নিরোগ পাত্র অগ্রাধিকার দেবেন নাকি প্রবাসী পাত্রের আশায় এইড্সকে স্বাগত জানাবেন?

          বর্তমানে দেশে বড় বড় সব হাসপাতালেই এইচআইভি/এইডসের ভাইরাস পরীক্ষার ব্যবস্থা আছে। বাংলাদেশের মতো মুসলিম প্রধান দেশে জনগণ এখনও পবিত্র ও নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন এবং যৌনাচারে অভ্যস্ত। কিন্তু ইন্টারনেটের বদৌলতে সম্প্রতি নিষিদ্ধ তালিকাভুক্ত ৮৪টি দেশীয় ওয়েবসাইট ছাড়াও সেক্সসংক্রান্ত ওয়েবসাইটগুলোর প্রভাবে এদেশের তরুণ-তরুণীদের একাংশ আজ মারাত্মক এইডসের ঝুঁকিতে আছে। বিভিন্ন ক্লাব নাইটক্লাব, হোটেলসহ বিভিন্ন গোপন আস্থানায় যেভাবে পাশ্চাত্যের অনুকরণে বিকৃত যৌনাচার সংঘটিত হচ্ছে, তাতে ভবিষ্যতে আমরাও ভয়াবহ এইড্সের আশঙকামুক্ত নই। তাই আমাদের স্বার্থেই আমাদের জনজীবন রক্ষার তাগিদে সকল প্রকার বস্নুফিল্ম, পর্নোসিডি, পর্নোপত্রিকা ইত্যাদিসহ যৌনব্যবসায় অর্থাৎ পতিতালয়, ভ্রাম্যমান পতিতাবৃত্তি, সেক্সগাল,র্ কলগার্ল নামের আড়ালে অসামাজিক ও অবৈধ কাজের বিস্তৃতিরোধ করতেই হবে। এসব বন্ধ করে সংশিস্নষ্টদের সামাজিক পূণর্বাসনের মাধ্যমে সমাজকে অবশ্যই পরিশুদ্ধ করতে হবে। অন্যথায় এইডসের হাত থেকে মুক্তি পাবার কোন আলাদীনের চেরাগ কোন বৈজ্ঞানিকের হাতে নেই, একথা মনে রাখতে হবে।
=০=